আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে নানান ধরে ফল জন্মালেও এবার তার বিপরীত ঘটেছে। সাঙ্গুর নদীরে চরে আশেপাশে ব্যাপক চাষ হয়েছে ব্রকলি নামে পুষ্টিকর সবজি। এই ব্রকলি সবজি পাহাড়সহ সারাদেশে বেশ আলোচিত। তবে সবজিটি অপরিচিত হওয়ায় বান্দরবানে ক্রেতারাদের কাছে অন্য রকমের সবজি ফল।
জানা যায়, পাতা পঁচা সার বা গোবর সার এক চতুর্থাংশ, বালু এক চতুর্থাংশ ও মাটি দুই চতুর্থাংশ মিশিয়ে ব্রোকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্রোকলির চারা রোপন করা যায়। কম বয়সের চারা দ্রুত বাড়ে। ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে। পরে ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝিতে শুরু হয় ব্রোকলি ফল তুলা যায়।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ব্রোকলি ফলটি সাঙ্গু নদীর চরে একজন কৃষক প্রথমবার চাষ করা হলে সেটি কৃষি বিভাগে নজরে আসে। পরে এই সবজি ফলের চাষের জন্য কৃষি বিভাগ হতে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি ব্রোকলি চাষের উৎপাদনের চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে কৃষি বিভাগ হতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর তীরে ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছে মো. আবছার নামে এক কৃষক। এতে প্রথমবার ব্রোকলি চাষ হলেও বাজারের শুরুতেই দামের চাহিদা রয়েছে বেশি। তবে ব্রোকলি দেখতে ফুলকপির মতই, তবে রংটা সবুজ। এর বর্ণ সবুজ বলে অনেকেই এক সবুজ ফুল কপি বলে। ব্রোকলিকে বাংলা ভাষায় বলা হয়ে থাকে এক ধরনের ফুলকপি। দেখতে ঠিক ফুলকপি মতন। এটি চাইনিজ খাবারের ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপকরণ এই সবজি। ব্রোকলি ফুলকপির মত অত বড় হয় না। সাইজে ছোট হলেও দামে খানিকটা চওড়া।
কথা হয় ব্রোকলি চাষী মো. আবু তাহেরের সাথে। তিনি বলেন, আমি সাঙ্গু নদীর বালু চরে প্রথমবার ব্রোকলি সবজি চাষ করেছি ১ বিঘা জমিতে। এতে আবাহাওয়া ও ভালো ফলন হওয়াতে ২ থেকে ৩ হাজার ব্রকলি সবজি উৎপাদন হয়েছে।
পাশ্ববর্তী আরেক চাষী মো. বাদশা মিয়া জানান, ব্রকলি চাষে ফলন ভালো হয়েছে। এবারে লাভবান হবেন, কারণ বাজারে চাহিদা বেশি। উৎপাদনের জন্য পার্বত্য এলাকাতেও ব্রোকলি সবজির পরিচিতি বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে ব্রকলি চাষে কৃষি অফিসাররা মাঠে এসে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এটি উৎপাদনে পরিমাণ অনুযায়ী সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলেই চলে।
কাঁচা বাজারে সবজি বিক্রেতা আব্দুর গফুর বলেন, ব্রোকলি ফলটি পাহাড়িরা তেমন খায় না। তবে অনান্যদের কাছে বেশ প্রিয়। এটি বাজারে চাহিদাও বেশি বিধায় বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বিক্রি ভালো হচ্ছে।

ডা. জ্যোতির্ময়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রোকলির সবজিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ আল্টিমেট ক্যান্সার ফুড। প্রতিদিন ব্রকলি খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক কাজ করে। ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন ‘সি’, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। ব্রকলি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, ব্রকলি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরিচিত নয়। এর অনেক পুষ্টি ও ওষুধি গুণ রয়েছে। এসব গুনের কথা জানতে পারলে ভোক্তাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। কৃষিতথ্য সার্ভিসের মাধ্যমে এই সব সবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানো সম্ভব।
তিনি আরও জানান, সাঙ্গু নদীর চরের কৃষক আবু তাহের পরিশ্রমে ব্রকলির ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি, অনান্য কৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। পাশাপশি কৃষি বিভাগ থেকে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।













