২৬ অক্টোবর ২০২৫

সাজিয়া আফরিন’র দু’টি কবিতা

ডাক শুনে পেছনে তাকাই

কত শতবার এমন হয়েছে জানো,
কতবার!
প্রেমিকের আঙ্গুল আমার আঙ্গুল ছুঁয়ে আছে,
হাতে মায়ার পরশ পাচ্ছি বেশ…
কিন্তু হঠাৎ করেই
তোমার আঙ্গুল আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল!

বড্ড বিড়াল স্বভাব আমার,
প্রেমিকের বুকে নাক ঘষতে ঘষতে
যখন সুখে ডুবে যেতে থাকি…
কতবার এসে তুমি
সেই ডুবন্ত আমিকে ডাঙ্গায় তুলেছ!

প্রেমে তুমি-
আর ডুবতে আমায় দাওনি ঠিকঠাক কখনোই।

তার গায়ের গন্ধে যখন মাতাল হতে চাই,
নাক দিয়ে কখনো-
কখনো আবার হৃদয় দিয়ে
শুষে নিতে চাই তার ভালোবাসাটুকুন।
নিমগ্ন হতে গিয়েই টের পাই তোমার উপস্থিতি…

ঠিক সেই মুহূর্তে
কতবার এসে তুমি
বুনোগন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছ আমার নিউরনে!

ভীষণ আদরে যখন
বন্দি হতে থাকি তার হাতের মুঠোয়,
আমি ভাঙ্গতে থাকি নিজেকে,
সে আঁকতে থাকে-
আমার দেহের ক্যানভাসে তার অধিকার।
তখন তুমি হঠাৎ এসে
তোমার দশনখ দিয়ে আঁচড় কাটো
এই শরীরের ভাঁজে ভাঁজে…

প্রেমিকের হাতের মুঠোয় থেকেও
আমার আঙ্গুল ছুঁয়ে থাকে তোমায়,
তার বুকে নাক ডুবিয়ে রেখেও
তোমার মাঝে ডুবসাঁতার দেই আমি,
দামি সুগন্ধি আমায় ভাসায় না,
তোমার গায়ের বুনোগন্ধের অতল নিষেধে
ডুবতে ডুবতে ভাসি আমি।

প্রেমিকের ওই ম্যারম্যারে আদরে
আমার শরীর জাগলেও,মন কিন্তু জাগে না।
তোমার হিংস্রতাই যে বারেবারে আমায়
কামুক করে তোলে…

কাকে গিয়ে বলি বলো তো
এমন আসক্তির গপ্পো!
কত কতবার আমি তোমার জন্যই
কেবল মনের পথে দ্বিচারিণী হয়ে হেঁটেছি।

পথ আর তুমি কোথায় গিয়ে যেন এক হয়ে আছ…
চাইলেও তোমায় আলগোছে তুলে সরাতে পারি না
আমার হেঁটে যাওয়া পথ থেকে।

ভাগ্যিস দ্বিচারিণীর কোন পুরুষবাচক শব্দ নেই।
নতুবা তুমিও বেশ টের পেতে…
এই আশ্বিনের মাঝে আজও ফাগুনেরা উঁকি দিয়ে যায়।

বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি

একদিন আমি হারিয়ে যাব,
সেইদিন খুব করে খুঁজবি আমায়,
দেখবি আমি নেই।
একটু একটু করে হারাব,
তোর পাশে থেকেই-
তোর পাশ থেকে হারিয়ে যাব,
তুই টেরও পাবি না জানিস!

তোর সমস্ত কাজের মাঝে
যেমনি করে আমি হারিয়ে যাচ্ছি,
এরপর
একদিন কাজ শেষে তোর অবসরে
আমায় আর খুঁজে পাবি না।
তোর ক্লান্ত ব্যস্ততায় এখন
প্রতিনিয়ত হারাচ্ছি আমি,
একদিন তোর অক্লান্ত অবসরেও কিন্তু আমি রইব না।

ভোরের সূর্যখেলায় আমার হাসির রঙ
আর ছোঁয়াতে পারবি না,
তোর বিকেল গুলোতে
আমি আর ফড়িং হয়ে উড়ব না,
তোর ব্যস্ত সন্ধ্যোগুলো
আমিহীনা বেশ স্বস্তিতেই কেটে যাবে জানি,
তবে যখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে আমায় খুঁজবি,
তখনও আর থাকব না কোথাও।

আমার শরীরের ভেতর ভাঙ্গন তুই টের পাস না,
মনের জোয়ার-ভাটার সময়ও
তুই এখন গুলিয়ে ফেলিস,
সামনে বসে থাকা আমার মাঝে তুই
এখন আর আমায় খুঁজিস না,
আমি বেশ টের পাই তোর মনের অসাড়তা,
অভিমান জমতে থাকে আমার দিস্তে দিস্তে,
সেই থেকে আমি হারিয়ে যাওয়ার হিসেব কষি।

নাগরিক জীবনের কোলাহলে তুই-
আমার না বলা কথাগুলো
আর কানেও তুলিস না,
অসুখ পোকাগুলো যে খেয়ে নিচ্ছে আমায়-
একটু একটু করে,
তাও আর তোর চোখে পড়ে না।

চলতে গিয়ে থেমে গিয়েছি
বারবার কেবল তোর জন্য
হয়তো তোকে এক নজর দেখব
কিংবা তোর চোখে নিজেকে দেখাব বলে থেমেছি,
যদিও আমার থেমে যাওয়ার কথা ছিল না, তবু্ও…

কেবল তোকে ভালোবাসব বলেই-
বাঁচতে চেয়েছিলাম আমি,
আজ আবার তোকে বাঁচাতেই হারিয়ে যাচ্ছি,
হারিয়ে যাচ্ছি আমি, বহুদূরে…
শেষ ট্রেনেও আমি আর ফিরে আসব না।

আরও পড়ুন