২৬ অক্টোবর ২০২৫

সাড়া ফেলেছে বিদ্যানন্দের ‘নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ’

হাসান সৈকত »

বাছাইকৃত ১২ লেখকের গল্প নিয়ে প্রকাশিত বই ‘নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ’ । সদ্য সমাপ্ত হওয়া অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে বইটি প্রকাশ করেছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী। শিক্ষিত মানুষের গল্পের চরিত্রে যারা এতোদিন বন্দি ছিল, তারাই আজ লেখক হিসেবে স্বীকৃত। এই বইটির মাধ্যমে হাজার বছরের বাঁধা পেরিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন নিরক্ষর মানুষেরা। তাঁদের খেয়ালি কথায় চিত্রায়িত হচ্ছে শিক্ষিত মানুষের চরিত্রও। এই যেন এক কলমের মুক্তি, কিছু মানুষের রচনার স্বাধীনতা।

নিরক্ষরের গল্পের বই এ কিভাবে সম্ভব! লিখতে না পারাই কি ভাষা প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা? লিখতে না জানা মানুষটিরও ইচ্ছে হয় নিজের গল্পটা বইয়ের পাতায় দেখতে। আর এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ‘বিদ্যানন্দ প্রকাশনী’।

বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, এসব বঞ্চিত মানুষের গল্প শুধুমাত্র অক্ষরজ্ঞানের অভাবে মৃত্যুর সাথে সাথে হারিয়ে যেতে না দেয়া। বিদ্যানন্দ প্রকাশনী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালীসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর কিছু নিরক্ষর মানুষের গল্প রেকর্ড করে সে গল্পগুলোর লিখিত রূপ দিয়েছে কীবোর্ডের বোতামে।

বই লিখার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে একজন লেখক বলেন, ছেলেকে শিক্ষিত করছি না খেয়ে, আর সে ছেলে আমার পরিচয় দেয় না, অশিক্ষিত বলে। আমি অশিক্ষিত হওয়ায় কেউ আমার কথা শুনে না!

সরেজমিনে বই মেলায় গিয়ে দেখা যায়, আঙ্গুলের টিপ দিয়েই নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন এক নিরক্ষর লেখক। বই মেলার ইতিহাসে হয়তো এটাই প্রথম। আজন্ম অক্ষরজ্ঞানের অভাবে যে মানুষগুলো বই ধরার সুযোগ পাননি, তারাই এবারের বইমেলার লেখক।

বিদ্যানন্দের স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, ইতোমধ্যেই স্টক আউট প্রথম মুদ্রণের সব কপি। লেখকদের হাতে র‌্যয়েলিটি বুঝিয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছে প্রকাশনীটি। সে সাথে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজও শুরু করেছে।

বিদ্যানন্দ কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথম প্রথম অনেকেই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন লেখক তালিকা থেকে। তবুও কেউ কেউ আমাদের বিশ্বাস করেছিলেন। আস্থা রেখে হয়েছেন সম্মানিত।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস বলেন, হতে পারে চাষাভুষার এসব গল্প অনেকেই পড়বে না, কিন্তু বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগ সাহিত্য রচনায় অনুপ্রাণিত করবে লক্ষ লক্ষ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন