বাংলাধারা প্রতিবেদক »
‘ইমাম হোসাইন (রা.) এর সংগ্রাম ছিল অন্যায়-অবিচার ও জালিমের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন মজলুমদের নেতা। কারবালা প্রান্তরে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য ইমাম হোসাইন (রা.) এবং নবী পরিবারের সম্মানিত সদস্যবর্গ তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তবুও জালিমের সাথে আপস করেননি। তাদের এ মহান আত্মত্যাগ বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের জন্য চিরন্তন প্রেরণা।’
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ্ বিশ্ব মসজিদ প্রাঙ্গণে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাত-এ-কারবালা কনফারেন্স’র সমাপনী ও প্রধান দিবসে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শাহসুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্-মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ)।
তিনি বলেন, ‘নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে শোষক শ্রেণীর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং জালিমদের দুর্গ গুঁড়িয়ে দিতে ইমাম হোসাইন (রা.) এর আদর্শ আমাদের নিরন্তর শক্তির উৎস। কারবালার ঘটনা প্রমাণ করে— জুলুম করে কখনো ক্ষমতাকে স্থায়ী করা যায় না; বরং যারা সত্য ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করে নিজেদের জীবনকে বিসর্জন দেন, তারাই চিরকাল বেঁচে থাকেন অজস্র হৃদয়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জালিম শাসক, শোষক শ্রেণী, সাম্রাজ্যবাদিরা ইমাম হোসাইন (রা.) এর আদর্শ ও কারবালার চেতনার জাগরণকে সবসময় ভয় করে। কারণ ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাণিত তরবারি। তার আদর্শ, কারবালার চেতনা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলে জালিম, সাম্রাজ্যবাদিদের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব থাকবে না। ইমাম হোসাইন (রা.) এর প্রেরণা মজলুমদেরকে একতার শক্তিতে বলীয়ান করে সকল প্রতিকূলতাকে জয় করতে উদ্বুদ্ধ করবে। তখন বৈষম্যহীন, সাম্যের মানবিক পৃথিবী গড়ে উঠবে।’
‘এ জন্য ১৪০০ বছর আগে থেকেই কারবালার চেতনাকে, ইমাম হোসাইন (রা.) ও নবী পরিবারের সদস্যদের আত্মত্যাগের স্মরণকে দমিয়ে রাখার জন্য জুলুমবাজ শ্রেণী সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে আসছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেণীর মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা কারবালার প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যতদিন আহলে বাইতে রাসুল (দ.) এবং তাদের প্রেমিকরা পৃথিবীতে থাকবে, এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’— বলেন সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী।
তিনি আহলে বাইতে রাসুলদের (দ.) মহৎ মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, রাখাইন, চীন, কাশ্মীরসহ বিশ্বের মজলুমদের রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি শ্রদ্ধার সাথে ইমাম হোসাইন (রা.) সহ আহলে বাইতে রাসুলদের (দ.) স্মরণ করেন। তিনি এ কনফারেন্সের পরিসরকে আরো বাড়াতে ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে বড়পীর গাউসুল আযম হযরত আবদুল ক্বাদির জ্বিলানী (রা.) এর পবিত্র বংশধর, শাহসুফি সাইয়্যিদ আফিফউদ্দিন জ্বিলানী বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তিনি ইমানের সাথে আহলে বাইতে রাসুলদের (দ.) প্রতি ভালোবাসার অপরিহার্য সম্পর্ক ব্যাখা করেন। বাংলাদেশে প্রিয় (দ.) এবং তার পরিবারবর্গের প্রতি ভালোবাসা দেখে তিনি অভিভূত হন ও এ দেশের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন।
‘আন্তর্জাতিক শাহাদাত-এ-কারবালা মাহ্ফিল’র পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মিজানুর রহমান ৩৭ বছর ধরে সফলতার সাথে আয়োজন হয়ে আসা এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পেছনে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সালে শায়খুল ইসলাম হযরত সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (ক.) এবং আল্লামা জালালউদ্দিন ক্বাদেরী (রহ.) এ সম্মেলনের শুভ সূচনা করেন। আজ এ সম্মেলন শুধু বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমহিমায় আয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আহলে বাইতে রাসুলদের (দ.) প্রতি ভালোবাসা, ইসলামের জন্য তাদের আত্মত্যাগ মানুষের মাঝে তুলে ধরছে এ সম্মেলন। ইমাম হোসাইন (রা.) এর চেতনার প্রসারে ভবিষ্যতে এ সম্মেলনকে বিস্তৃত করার জন্য আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
মহানবী (দ.) এবং সম্মানিত আহলে বাইতে রাসুলদের (দ.) প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম নিবেদন শেষে বিশ্ববাসীর কল্যাণে দোয়া করেন শাহ্সুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাইজভাণ্ডারী।













