কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ের ভেতর ভুট্টা ক্ষেত থেকে অপহরণের তিনদিন পর চার কৃষকের মাঝে তিন কৃষক ফিরে এসেছেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েই সশস্ত্র ডাকাতদলের কবল থেকে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) মাঝরাতে বাড়িতে ফিরেন বলে জানিয়েছেন ভিকটিম আব্দুর রহমান।
ভিকটিম আব্দুর রহমান জানান, প্রতিদিনের মত তারা ভুট্টাখেতে কাজ শেষ করার পর পাহাড়ের টং বাসায় বিশ্রাম করছিলেন। এসময় ১৫/২০ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে তাদেরকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতর চোখ বেঁধে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়।সেখানেও চোখ বেঁধে রেখে দিনরাত টাকার জন্য নির্যাতন করতো। অপহৃত চারজনের মধ্যে আব্দুস সালামের সবচেয়ে বর্বর ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন করা হয়েছে।
তাদের কাছে দাবি করা হয়, জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা। সেখানে আব্দুস সালামের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করার জন্য তাকে অপহরণকারীরা রেখে দিয়েছে।
আব্দুর রহমান আরও জানান, পুলিশ প্রথম দিন পাহাড়ে অভিযান যাওয়ায় তাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। তাছাড়া তার স্ত্রী হামিদা বেগম সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেয়ায় তার উপর আরও নির্যাতনের তাপমাত্রা বাড়ায় অপহরণকারিরা।
ফিরে আসা অপহৃত ভিকটিমরা জানান, অপহরণকারিদের কাছে রয়েছে দামি মোবাইল সেট ও ল্যাপটপ। আমাদের উদ্ধারের বিষয়ে কারা কি করে সব তথ্য তারা মুহূর্তে জানতে পারে। প্রাণে বাচঁতেই অপহরণকারী সদস্যদের পায়ে ধরে বুঝিয়ে তিনজনে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে তাদের কবল থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি।
ভিকটিম মুহিবউল্লাহ জানান, অপহরণকারী ডাকাতদলের হাত থেকে মুক্ত হতে তার পরিবার আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা, স্বর্ণ ও বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে ডাকাতদলকে দিয়েছে। ডাকাতদলের নির্যাতনে তার হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ফিরে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের কোন তথ্য দিলে তাদেরকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে অপহরণকারিরা।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি (শনিবার) রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড লেচুয়াপ্রাং পাহাড়ের ভেতর থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। প্রতিদিনের মত চার কৃষক ভুট্টা, ধান ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদের কাজ করে বিশ্রামে ছিলেন। পাহাড়ি হাতি তাড়াতে রাত জেগে পাহারা দিতে তারা ক্ষেত এলাকায় রাতে অবস্থানকালে সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬নম্বর বড় লেচুয়াপ্রাং মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম(৪৮), একই এলাকার ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫), রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ(১৫) ও ফজল করিমের ছেলে আব্দুল হাকিমকে(৪২) পাহারা ঘর থেকে অপহরণ করেন।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. আব্দুল হালিম জানান, চার কৃষকের মাঝে তিনজন অপহরণকারী ডাকাত দলের কবল থেকে ফিসে এসেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছি। অপরজনকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অপহৃত ভিকটিমের পরিবার থেকে এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ থানায় দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ওসি।
অন্যদিকে, কক্সবাজার র্যাব-১৫’র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের অভিযানেই অপহৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। র্যাব-১৫, কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, চার কৃষক অপহরণের খবর জেনে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) টেকনাফের হ্নীলা পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত তিনজন ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র্যাব-১৫’র সদস্যরা।
৭ জানুয়ারি রাতে অপহরণের পর হতে ভিকটিমদের পরিবার হতে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে ভিকটিমদেরকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এরপরই অভিযানে যায় র্যাব-১৫।













