কক্সবাজার প্রতিনিধি»
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট, এই তিন দিন ধায্য করেছেন আদালত।
এর আগে, ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কঠোর লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা স্থগিত করা হয়।
সোমবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘গেল ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ মামলার চার্জ গঠন করেন। এসময় বিজ্ঞ বিচারক ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই এ মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধায্য করেছিলেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে তা পিছিয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট এ মামলার বাদী পক্ষের ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে।‘
উল্লেখ্য, আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
একই বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলা করেন নিহত সিনহার সহযাত্রীদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু দুদিন না যেতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ঘটনার পঞ্চমদিন ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় আসামি করাসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে।
মামলা নথিভুক্ত হবার পর ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ৩ জন (পুলিশের সোর্স), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরো ৭ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গত ২৪ জুন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে। আসামীদের মধ্যে ১২ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। শুধু ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাগর দেব আদালতে জবানবন্দি দেননি।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির চার্জসীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা মামলাটি বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামী লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন রিভিশন আবেদন দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য করেন ২০ অক্টোবর। কিন্তু শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে মামলাটি শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানীর দিন আবারো পিছিয়ে যায়। সেদিন ১৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য্য হয়। সেদিন দু’পক্ষের শুনানির পর কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামী পক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন।
ফলে, হত্যা মামলা হিসেবে গৃহীত অভিযোগ পত্র মতে এখন স্বাক্ষীর শুনানির জন্য ১৫ জনকে সমন দেয়া হয়েছে।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘দেশে আলোড়ন তোলা এ মামলার কার্যক্রমেই সবার দৃষ্টি নিবন্ধিত রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত দিনে স্বাক্ষীরা উপস্থিত হবে। কোন জটিলতা না হলে মামলার কার্যক্রম নিজস্ব গতিতে চলবে ইন শা আল্লাহ।‘
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













