কক্সবাজার প্রতিনিধি »
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সোমবার (২৪ আগস্ট) ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দ দুলালসহ ৭ পুলিশের দ্বিতীয় দফে আরো ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার দুদিনের মাথায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলায় পরে যুক্ত হওয়া আসামী কনস্টেবল আবদুল্লাহ। তিনি আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য এবং ঘটনার সময় চেকপোস্টে দায়িত্বরত ছিলেন।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা হতে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে বিকেল থেকে তাকে আদালতে নিয়ে আসেন র্যাব-১৫ এর সদস্যরা। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সিনহা হত্যা মামলার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আসামীদের আরো জিজ্ঞাবাদ করা দরকার। মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে যোগ হওয়া সাতদিনের রিমান্ডে থাকা এপিবিএনের তিন সদস্যের মাঝে কনস্টেবল আবদুল্লাহ স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছেন বুধবার।
গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর একটি দল এপিবিএনের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাবাসাদের জন্য এনে তাদের সিনহা হত্যা মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে যুক্ত করে।
তারা হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ-পরিদর্শক শাহাজাহান, কনষ্টেবল রাজিব ও আব্দুল্লাহ। এরা তিনজনই ৩১জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৮ আগস্টই মেজর সিনহা হত্যা মামলায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের বিরুদ্ধে ১০দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানী শেষে ৭ দিনের রিমান্ড নেয়ার আদেশ দেন বিচারক তামান্না ফারাহর আদালত। এবং ২২ আগস্ট রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়। ২৮ আগস্ট তাদের রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে প্রথম দফে ৭ দিনের রিমান্ড শেষে গত সোমবার মামলার প্রধান তিন আসামী ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দলাল এবং অপর চার পুলিশ সদস্যের সবার চার দিন করে আবারো রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দলাল ছাড়া অন্য চার পুলিশ সদস্যরা হলো, বহিস্কৃত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। এ মামলায় সিনহার দুই সফরসঙ্গী কারান্তরিণ হন।
গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক রয়েছে। তাদের নামে কোন পুলিশ সদস্য কক্সবাজারে কর্মরত নেই বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। কিন্তু এ দুই আসামীর পরিচয় সনাক্তে জেলা পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে র্যাব, এমনটি জানিয়েছে আশিক বিল্লাহ।
এ মামলায় নথিভুক্তসহ সহযোগী আসামী হিসেবে এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন সময় প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত। রিমান্ড শেষ করে সোমবার ওসি প্রদীপসহ পুলিশের ৭ সদস্যকে আবারো ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত ৪দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আর প্রথম দফা রিমান্ড শেষ হবার আগেই স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছেন এপিবিএন সদস্য আবদুল্লাহ।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













