সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি»
হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীর অন্যতম শিব চতুদর্শী ও তীর্থ মেলা তিনদিন ব্যাপী সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) থেকে শুরু। এ উপলক্ষে সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব কার্যালয়ে মেলা কমিটি ও স্রাইন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে সাংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রবিবার দুপুরে লিখিত বক্তব্যে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ২রা মার্চ পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে তিনদিন ব্যাপী কলিযুগের সব চেয়ে বড় ও প্রধান ঐতিহ্যবাহী সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব শিব চতুর্দশী মেলা এবং ১৭-১৮মার্চ দোল পূর্ণিমা মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এসময় দেশ ও বিদেশ থেকে পূণ্যার্থীরা পূণ্য লাভের আশায় চন্দ্রনাথ ধামে প্রতিবছর তীর্থ দর্শণ করতে ছুটে আসে লাখ লাখ ধর্মাবলম্বী নর নারী। কথিত রয়েছে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ পৃথিবীর সব তীর্থস্থান দর্শন করলেও অন্তত একবার যদি সীতাকুণ্ড তীর্থ ভূমি দর্শন না করে তাহলে তার তীর্থ দর্শন সম্পূর্ণ হয় না।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, মেলাকে ঘিরে তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ, আনসার বিজিবি ও সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য সংস্থা সমুহ মেলা চলাকালীন সময় সার্বক্ষনিক সহাযোগীতা করবেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সকল রকম নিরাপত্তা গ্রহন করা হয়েছে। এতে প্রায় তিন শতাধিক নির্রাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকছেন।
চন্দ্রনাথ তীর্থের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাশ। সাংবাদিক সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ,সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি এস.এম ফোরকান আবু ও এম হেদায়েত উল্ল্যাহ প্রমুখ ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ,মেলা কমিটির সহ সভাপতি প্রেমতোষ দাশ, গোপাল পাল, অতিরিক্ত সম্পাদক সমীর শর্ম্মা, ,অর্থ সম্পাদক পিন্টু ভট্টাচার্জ। শিব চতুর্দ্দশী মেলা ও দোল পূর্ণিমা মেলা সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ভাবে সু-সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এবং দেশ বিদেশ থেকে আগত পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তায় মেলা কমিটি ও স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক জনস্রুতি আছে ব্রিটিশ আমলের পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় শীর্ষে সুদূর মায়ানমার থেকে আধ্যাত্বিক গুণসম্পন্ন চন্দ্রজ্যোতি বৌদ্ধ ভিক্ষু অষ্ট ধাতু নির্মিত ৩টি বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে বঙ্গ দেশে আসেন এবং উনার সাথে আনীত বুদ্ধ মূর্তি সমূহের একটি স্থাপন করেন পটিয়ার চেদির পুনিতে,একটি স্থাপন করেন চট্টগ্রাম বুদ্ধ বিহারে আর একটি স্থাপন করা হয় চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শীর্ষে। সাথে একটি বুদ্ধ পদচিহ্নও স্থাপন করা হয়েছিলো।সেই থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে চন্দ্রজ্যোতি বুদ্ধ ভিক্ষু প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রজ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূজা নিয়মিত চলতো। পাশাপাশি সেইসময় থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের স্থানটিতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ত্রিলোক পূজ্য মহামানব ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধ বিশ্ব পরিভ্রমণ কালে উক্ত স্থানটিতে পা রেখেছিলেন এবং ক্ষণিক বিশ্রাম নিয়েছিলেন।তাছাড়া সীতার দেহের একটি অংশ এই পাহাড়ের চুঁড়ায় ফেলেছিল,আর এজন্যই চন্দ্রনাথ তীর্থ হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী এই সম্প্রদায়ের অন্যতম পূণ্য তীর্থস্থান হিসেবে পরিনত হয়।
বর্তমানে ঐ স্থানটিতে চন্দ্রজ্যোতি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংশবাশেষ কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। এখানে শিব চতুর্দ্দশী মেলায় ও বিভিন্ন সময়ে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বুদ্ধ পূজা ও বন্দনাদী করে থাকেন। এই শিব চতুর্দশী মেলায় দেশের সব জেলা থেকে ও ভারত,নেপাল,শ্রীলংকা থেকে পূর্ণার্থীরা পূজা,পূর্বপুরুষদের জন্য পুজা করে থাকেন।













