বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড, পর্যটননগরী কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন, রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণ, গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণসহ চলতি মাসে পর পর একাধিক দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না সরকারের শীর্ষ মহল। সাধারণ জনগণও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু? প্রতিটি ঘটনার পেছনে কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না বা কী কারণে এসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তারা।
গত কয়েকদিনে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, মেয়রসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন- এসব ঘটনার কোনটাই স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এসব অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোর কোনো কারণ বলতে না পারলেও এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তারা। গত ৪ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদম রসুল এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন’ নামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্ল্যান্টটিতে সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করার সময় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের কাঁচের জানালা, দরজা, টিনের ছাদ ও ঘর ভেঙে গেছে।
একইদিন দুপুরের পরে পর্যটননগরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।
গত ৭ মার্চ রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে অন্তত ২২ জন নিহত ও ৬৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার দুই দিন পরেও বিস্ফোরণের মূল কারণ জানাতে পারেনি কেউ। কেউ কেউ বলছে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ, আবার তিতাস বলছে কোনো গ্যাস ছিল না। অনেকে বলছে সুয়ারেজের গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ। এখানেও প্রশ্ন রয়েছে, সুয়ারেজের গ্যাস কি পাইপ দিয়ে উপরে উঠে না? তাহলে তো ভবনের প্রতিটি ফ্লোরেই গ্যাস থাকার কথা! তবে শুধু সুয়ারেজের গ্যাসে এতো বড় ভয়াবহ বিস্ফোরণ সম্ভব কিনা তা ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্লেষকদের। এছাড়া এখানে প্রাথমিকভাবে বোমা বা বারুদের কোনো অস্তিত্ব পাননি তদন্তকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাহলে প্রশ্ন হলো এই বিস্ফোরণ হয়েছে কিভাবে? এর আগে ৫ মার্চ একই ধরনের বিস্ফোরণে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ৩ জনের মৃত্যু হয়।
এসব ঘটনার পর ৮ মার্চ সকালে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা দুর্ঘটনা অথবা নাশকতা কি না সেটা সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই নিয়ে কারও মাথাব্যথার প্রয়োজন নাই। গুলিস্তান, সীতাকুণ্ড ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের কাজে বাইরে, ঠিক সেই সময় দেশে কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেছে। সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ত আছে কি না, তা সরকার খতিয়ে দেখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কী কারণে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। বিস্ফোরণের কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো কেন এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণগুলোর কারণ খুঁজতে আপাতত বিদেশি কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। মন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমপ্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত তৈরি করতে সক্ষম। এর জন্য বিদেশি কারও সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।
সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অনেকগুলো প্রাণ হারিয়েছি। এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার যাতে কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ স্বাভাবিক নয় বলে বুধবার দুপুরে মন্তব্য করেছেন র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি, এটা নিশ্চিত হয়েছি।