শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত»
মানুষ কখনও কখনও তার স্বপ্নের সমান কিংবা তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। মানুষকে তার স্বপ্ন প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় পূরণ হওয়ার তাড়নায়।
সেই স্বপ্নের তাড়নায় প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে মিরসরাইয়ের আহমেদুল হোসাইন সৌরভ। শৈশবের দূরন্তপনায় ক্রিকেট যেন মিশে গিয়েছে তার প্রাণের সাথে। ধীরে ধীরে গ্রামের ক্রিকেট মাঠে নিজের ক্রিকেট সামর্থ্যের জানান দিতে থাকে সে। ১৫ বছর বয়স থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া সৌরভের কাভার ড্রাইভ, পুল শর্ট, স্ট্রেট ড্রাইভ শর্টে মারকুটে ব্যাটিং দেখে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হতো যে কেউ। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে মিরসরাই থেকে পাড়ি জমায় চট্টগ্রাম শহরে। সেখানে চট্টগ্রাম জুনিয়র ট্রেনিং ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলন শুরু করে সৌরভ। ৪ মাস অনুশীলন শেষে পারিবারিক নানা জটিলতায় এবং পড়াশোনার জন্য আবার গ্রামে ফিরে আসতে হয় তাকে। ২০১৭ সালে মিরসরাইয়ের প্রথম যাত্রা শুরু করা মিরসরাই স্পোর্টিং ক্লাবে আবারও ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করে আহমেদুল হোসাইন সৌরভ। নেটে একের পর এক চোখ ধাঁধানো স্ট্রোকে প্র্যাকটিসে মাতোয়ারা থাকতো সে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই একাডেমীর প্রতি নজর আছেই বা কজনের। তারপরও মিরসরাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রথম বারের অংশগ্রহণ করে উদীয়মান এই ক্রিকেটার। সেখানে গড়ে ৩৩ করে রান ছিলো। দলের একমাত্র নির্ভরশীল টপ ওর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সবার নজর থাকতো সৌরভের দিকে। এছাড়া মিডিয়াম সিমার হিসেবে গড়ে ৩ উইকেট করে শিকার করেছিলো সে। এরপর সৌরভের ব্যাটিং মুগ্ধতায় সলিমপুর ক্রিকেট একাডেমীর কোচ মোহাম্মদ কামাল তাকে ভিড়িয়ে নেন তার দলে।

মেরিডিয়ান বিজয় দিবস ক্রিকেট টূর্ণামেন্টে সৌরভের দূর্দান্ত পারফরম্যান্সে রার্নাসআপ হয় সলিমপুর ক্রিকেট একাডেমী। ৪ ম্যাচে ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ গড়ে ৪৩.৫ করে মোট ১৭৪ রান করে সে। এছাড়া শিকার করে মোট ৭ উইকেট। ওই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয় আহমেদুল হোসাইন সৌরভ। চমৎকার ব্যাটিং স্টাইল, শর্ট সিলেকশন, আই কন্টাক্ট এবং নজরকাড়া পার্ফরম্যান্সের জন্য এরপর সৌরভ জায়গা করে চট্টগ্রাম প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে। সীতাকুন্ড উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে প্রথম ডাউনে নেমে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চমৎকার সূচনা করে সৌরভ। কাভার ড্রাইভ, মিড অন, স্কয়ারলেগ, স্ইুপ শর্টে ৩২ রান করে এই ব্যাটসম্যান। তারপর ধারাবাহিক ভাবে ৪ ম্যাচে ২৮,৩২,৩৯,৩২ রান করে সে। এছাড়া দলকে ব্রেক থ্রু এনে দিতে উইকেট নিয়েছেনও এই খেলোয়াড়। এরপর ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ক্রিকেটলীগ গুলোতে সৌরভের পারফরম্যান্স ছিলো ধারাবাহিক। মিরসরাইয়ের ক্রিকেট আসর গুলোতে এই ক্রিকেটারের অংশগ্রহণ এবং রান তুলে দলকে জিতানোর দায়িত্ব ছিলো নিয়মিত। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ এবং ম্যান অব দ্যা সিরিজের পুরষ্কার গুলো যেন বরাদ্দ এই ক্রিকেটারের জন্য।
তবে সুযোগের অপেক্ষায় থমকে আছে সৌরভের ক্রিকেট যাত্রা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্ন বিভোর সৌরভের প্রয়োজন সুযোগ। সুযোগ পেলে সৌরভ পারবে নিজেকে মেলে ধরতে।

মিরসরাই স্পোর্টি ক্লাবের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছায়েদ আনোয়ার বাবু বাংলাধারাকে বলেন, সৌরভের সাথে আমি দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলছি। ওর ভিতর প্রতিভা আছে, সে প্রতিভাকে সে সুযোগের অভাবে মেলে ধরতে পারছে না। নিয়মিত প্র্যাকটিস করে সে নিজেকে ফিট রাখছে। তার ব্যাটিং কোয়ালিটি জাতীয় মানের।
মিরসরাই স্পোর্টি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন দুলাল জানান, আমাদের গ্রামঅঞ্চলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। আমাদের দেখা সেসব খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌরভ সেরা একজন খেলোয়াড়। ওর ব্যাটিং, ফিল্ডিং একজন পরিপূর্ণ র্স্পোটস ম্যানের মতোই। দেশের ক্রিকেট নিয়ে যারা ভাবেন কিংবা চিন্তা করেন আমি তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে সৌরভের মতো ক্রিকেটার গুলোর যেন কদর করা হয়। সৌরভরা যেন হারিয়ে না যায়।

সীতাকুন্ড উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ১ম বিভাগ ক্রিকেট টিমের সাবেক প্রধান কোচ মোহাম্মদ কামাল বলেন, সৌরভকে সুযোগ দেওয়া হলে সে অনেক ভালো জায়গায় যেতে পারবে। তার ফিটনেস এবং ব্যাটিং যোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার ক্রিকেট সেন্স এবং শর্ট সিলেকশন অনেক দারুণ। আমি তাকে চট্টগ্রাম ১ম বিভাগ লীগে খেলার সুযোগ করে দিই। সেখানে চমৎকার খেলেছে।
তিনি আরো বলেন, সৌরভের মতো ক্রিকেটাররা যেন হারিয়ে না যায়,সুযোগ পেলে সৌরভ একদিন জাতীয় পর্যায়ে খেলবে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













