আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে গেলেও ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নৌকার লোকজন এখনো নানানভাবে ভয়ভীতি, মারধোর ও চাপে রাখার চেষ্টা করছে। ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ ও দখলের ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে- সেই প্রত্যাশা করছি।’
স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থীর অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, ‘তারা নিজেরা মারামারি করে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে চায়। নৌকার অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের স্বতস্ফূর্ত
অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ভোটে নৌকার জয় হবে।
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে সংশয় ও শঙ্কা প্রকাশ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদও। তিনি বলেন, ‘নৌকার লোকজন বিভিন্নভাবে আমাদের কর্মীদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন ও ভোটকেন্দ্র জবরদখল করে ভোট নেয়ার পাঁয়তারা করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নিরেপক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।’
নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও দেখা যায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। অবাধে ভোট দিতে পারা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক ভোটার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব এ নীতি তো এখন আর নেই। এখন জোর যার মুল্লুক তার। আমার ভোট আমি পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারব কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
এদিকে ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে আশার বাণী শোনালেন প্রশাসন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। এখানে ৭জন প্রার্থী আছেন। আমাদের কাছে সবাই সমান।
নৌকার লোকজন কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধোর ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে তা আমলে নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন মোশাররফ-তনয় মাহবুবুর রহমান রুহেল। নৌকার বিপরীতে এখানে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগনেতা, মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। নৌকা আর ঈগলপ্রার্থী ছাড়া এখানে আরও ৫জন প্রার্থী নির্বাচনীমাঠে আছেন। তারা হলেন, এমদাদ হোসাইন চৌধুরী (লাঙ্গল), আবদুল মান্নান (চেয়ার), মো. ইউসুফ (টেলিভিশন), নুরুল করিম আফছার (একতারা) ও শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (পাঞ্জা)।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭ প্রার্থী গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই শুরু করেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় নির্বাচনের শেষ মুহুর্তের প্রচারণা শেষ করেছে প্রার্থীরা। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার গণসংযোগ, পথসভা, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে ব্যস্তসময় অতিবাহিত করেছেন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৭১ হাজার ৭৫২ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন। পুরুষ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪১। মহিলা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ২। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৬টি।













