চট্টগ্রামে গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণ রক্ষার্থে একজন সংসদ সদস্য, শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সেনাবাহিনী এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় এবং আশ্রয়প্রার্থীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। এই অস্থির পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।
চট্টগ্রাম থেকে আশ্রয় নেওয়া একমাত্র সংসদ সদস্য হিসেবে তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এমএ লতিফ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি সেনানিবাসে আশ্রয় নেন এবং পরে ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের মাদারবাড়ি এলাকা থেকে সেনাবাহিনী তাকে আটক করে।
তালিকায় আরও রয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, নগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি নুর ই আলম মিনা, রাউজানের ইউএনও অংগ্যজাই মারমা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদুল ইসলাম।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমানসহ হালিশহর, খুলশী, হাটহাজারী থানার ও পুলিশ লাইনের একাধিক কনস্টেবল ও এএসআই।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের সহিংসতা, দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এসব ব্যক্তি আশ্রয় চান। পরিস্থিতির তাৎক্ষণিকতা এবং মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে তাদের পরিচয় যাচাই না করে আশ্রয় দেওয়া হয়।
মোট ৬২৬ জনকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন বেসামরিক কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, ১২ জন পেশাজীবী ও ৫১ জন পরিবারের সদস্য ছিলেন। অধিকাংশ ব্যক্তি ১-২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। তবে ৫ জনকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সেনাবাহিনী জানায়, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট আইএসপিআর থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
তবে সম্প্রতি কিছু মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে জনগণকে সত্য তথ্য জানাতেই পুরো ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এআরই/বাংলাধারা