মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
পাহাড় সমুদ্র আর নদীর মিলনমেলা চট্টগ্রাম শহর। জোয়ার আর ভাটার মধ্যদিয়ে চলছে সাগরের দিনকাল। এই জোয়ার আর ভাটা দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা উৎসুক জনতার ভিড়। তাই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের পদচারণা বালুকারাশিকে মাতিয়ে তুলেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি যেন আগতরা বাসায় ফিরতে চান না। প্রায় তি কিলোমিটার দীর্ঘ রেলিং যেন সৈকতের সৌন্দর্য্যকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময় যেন পর্যটকদের বিরামহীন ছবি তোলা স্মৃতির পাতায় আটকে থাকবে।
বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে পর্যটন স্পটে আনন্দে আত্মহারা পর্যটক। প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে গড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পটে এখন পর্যটকে টুইটুম্বুর। ঈদের এই আনন্দকে শতভাগ উপভোগ করতে চট্টগ্রাম নগরীর ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়া ভিড় ছিল পর্যটন স্পটগুলোতে। এরমধ্যে বিনে পয়সার পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। ফলে মঙ্গলবার সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সড়কে যেমন একদিকে গাড়ির জট অন্যদিকে কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সড়কে নেভাল একাডেমি পর্যন্তও ছিল গাড়ির ভিড়।
৩ দিনের সরকারি ছুটির শেষ দিনের পরও মঙ্গলবার ছিল বিনোদন স্পটগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড়। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আশপাশ এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার গাড়ির জটে পড়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল আবার বিকেলে যারা সৈকতে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেছে তারা সন্ধ্যা নাগাদ সৈকতে পা রাখতে পেরেছে। শত শত গাড়িতে চড়ে আসা লাখো যাত্রীর ভিড়ে এ পর্যটন স্পটটি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কৌতুহলী মানুষ আর যানবাহনের ভিড়ে অনেকেই এ স্পট এড়িয়ে নেভাল একাডেমীর সংলগ্ন কর্ণফুলীর মোহনা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ভিআইপি সড়কে প্রতিরক্ষা দেয়ালের উপর বসেই সময় কাটিয়েছে। গুটি পিয়াজু আর কাকড়ার স্বাদে সময় কাটিয়েছে অবস্থান নেয়া পর্যটকরা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ প্রতিবন্ধকতার কারণে কাটগড় হয়ে পতেঙ্গা সড়কে যানবাহন চলাচল জটের যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজের কারণে বন্ধ আছে নৌ বাহিনীর বাউন্ডারি দেয়াল ঘেষে চলে যাওয়া কর্ণফুলী মোহনার দিকের ভিআইপি সড়ক। ফলে এয়ারপোর্ট সড়কের উপর চাপ পড়ে গিয়ে সৈকতমুখী বাটারফ্লাই পার্কের রাস্তায় তবুও পর্যটকদের মাঝে ক্লান্তি ছিল না। বিষন্ন মন নিয়ে কেউ ফিরে যায়নি। ঘুরে ফিরে কোন না কোন অংশে ঠাই করে নিয়েছে কর্ণফুলী তীর ঘেষে যাওয়া এ সড়কের কোন এক স্থানে।
মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে বিকেল চারটা থেকে কোন জেয়ার ছিল না রাত দশটা পর্যন্ত। ফলে সৈকতের বালুকা রাশিতে পা জোড়া ঘেঁষে চলে পানিতে পাড়ি জমিয়েছে পর্যটকরা। অর্ধশত স্পীড বোটে ও ইঞ্জিন বোটে চড়ে অনেক পর্যটক সমুদ্রের বিশালতায় নিজেদের আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে। অনাবিল শান্তির পরশে পতেঙ্গা সৈকতকে মনে রাখবে নবাগত পর্যটকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে যারা ঈদ করতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে সমুদ্রের অবয়বে নিজেকে মেশাতে সৈকতে পা রেখেছিলেন তারা আবারও ফিরে আসবেন এ আঙ্গিনায় এমনই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন নবাগতদের অনেকেই।
এদিকে, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে থাকা বহদ্দারহাটের স্বাধীনতা পার্ক আর পাহাড়তলীর ফয়’স লেক টুইটুম্বুর ছিল পর্যটকদের ভিড়ে। বর্তমানে চট্টগ্রামের একমাত্র শিশু পার্ক আগ্রাবাদস্থ কর্ণফুলী শিশু পার্ককে ঘিরে সকল বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল। অপরদিকে, নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভয়বে গড়া কনকর্ড এমিউজমেন্টের ফয়’স লেক ও ফিরোজ শাহ এলাকার সী ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় নবাগতদের মধ্যে অনেকটা বিরক্তি সৃষ্টি করেছে। কারণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনা থাকা ফয়’স লেককে ঘিরে পর্যটকদের নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের এ ধরনের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে পাহাড় কেটে রিসোর্ট তৈরি করার মধ্য দিয়ে। তবুও এ স্পটটিতে পর্যটকদের ভিড় সামলানো যাচ্ছে না নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে থাকার কারণে। আগতদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন সরকারি সম্পত্তির উপর গড়ে তোলা এ স্পটে অনেকেই পকেট পুরে টাকা নিয়ে আসেন না। কিন্তু এ স্পটে প্রবেশে নগরীর নয়, দেশের সবচেয়ে বেশি আদায় করা হয়। ফলে বিত্তশালীদের ক্ষমতা থাকে প্রবেশের। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা এ আঙ্গিনা থেকে বেশিরভাগ সময় প্রবেশদ্বার থেকেই ঘুরে যেতে হয়।