২৮ অক্টোবর ২০২৫

সৈকতে এবার ভেসে আসছে মৃত জেলিফিশ

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

কক্সবাজারে ভেসে আসছে বক্স প্রজাতির মৃত জেলিফিশ। গত কয়েকদিন ধরে ঢেউয়ের তোডে ভেসে আসা মৃত জেলিফিশ পড়ে আছে সাগর পাড়ে। এসব মৃত্যুর কারণ জানতে উঠে পড়ে লেগেছে বিজ্ঞানিরা। নমুনা সংগ্রহ করে তারা এখন গবেষণায় ব্যস্ত। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকালেও কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে দেখা যায় অসংখ্য মৃত জেলিফিশ।

বুধবার বিকেলেও ছিল এসব জেলিফিশ। এসব মৃত জেলিফিশ গত কয়েকদিন ধরে ঢেউয়ের তোডে ভেসে বালিয়াডিতে আটকে থাকছে বলে জানিয়েছেন বিচ সংশ্লিষ্টরা।

দরিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন জানান, কয়েকদিন ধরে সমুদ্র পাড়ে দেখা মিলছে মৃত জেলিফিশের। দরিয়া নগর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মৃত জেলি ফিশের মিছিলটি বেশ ভারী। এসব জেলি ফিশের একেকটির ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি। সাগর পাড়ে একসাথে এত জেলি ফিশের মৃত্যু আগে দেখিনি। এবারই প্রথম এমনটা হয়েছে।

এদিকে, সমুদ্র গবেষনা ইনস্টিটিউটর বিজ্ঞানী আবু সাইদ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেডে গেলে কম লবণাক্ততার জায়গায় জেলেফিস উপকূলে চলে আসতেই আটকে পড়ে বালুতে। তখন মরে যায়।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। হঠাৎ করেই অনেক ট্রলার মাছ ধরতে গেছে। তাদের জালে আটকেও অনেক জেলিফিস মারা গিয়ে থাকতে পারে। তবে মঙ্গলবার রাতে মৃত ভেসে আসা জেলি ফিশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষনার পরই মৃত্যুর কারন নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন সমুদ্র দূষণ বা অন্যকোন কারণ আছে কিনা তাও গবেষণায় উঠে আসবে।

বিজ্ঞানী আবু সাইয়েদ শরীফ বলেন, প্রাণঘাতি না হলেও সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা এসব জেলি ফিশের সংস্পর্শে গেলে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, এটা জেলিফিশ মরার কোন সিজন নয়। হয়তো জেলিফিশ উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ছে। পরে জেলেরা মাছগুলো ফেলে দেয়ায় মরা মাছ সৈকতের বেলাভূমিতে আসতে শুরু করেছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য মরা জেলিফিশ বালুতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসব জেলিফিশের মধ্যে কোনোটা আকারে ছোট, কোনোটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। তবে এগুলো কি কারণে মারা যাচ্ছে এর সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রের (বোরি) মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, সাগরে জেলিফিশ প্রজাতির প্রাণীগুলো সামুদ্রিক ভীমরুল হিসাবে পরিচিত। অত্যন্ত বিষাক্ত এসব জেলিফিশ সামুদ্রিক মাছের জম। ব্যাপক হারে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে এরা।

বোরি ডিজি বলেন, সাগরে অর্ধশত প্রকারের জেলিফিশ রয়েছে। তন্মধ্যে এসব ‌‘বক্স জেলিফিশ’ মাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। প্রচুর মাছ খেয়ে ফেলে এসব বক্স জেলিফিশ। বিষাক্ত হওয়ার কারণে জেলিফিশের সাথে স্পর্শ হওয়া মাত্রই যে কোন মাছ মারা যায়।

তিনি আরও জানান, সামুদ্রিক কাছিমের অন্যতম প্রধান খাদ্য জেলিফিশ। কাছিমের চেয়ে জেলিফিশের উপদ্রব বেশি হলে সামুদ্রিক মাছের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। সাগরে জেলিফিশের মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, সায়মনবিচ ও দরিয়া নগর পয়েন্টসহ হিমছড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটারের একাধিক পয়েন্টে জোয়ারের পানির সঙ্গে অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসে আটকা পড়েছে। মরা এ জেলিফিশগুলো উৎসুক পর্যটকরা দুর্গন্ধের কারণে দেখতে পারছেন না । বাতাসের বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ দেখছেন। এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে গোটা সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সৈকতের বালিয়াড়িতে মরা জেলিফিশ ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক পর্যটক জেলিফিশ না চেনায় এগুলোর উপর হেঁটে গোসলে নামছে। আবার অনেকে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে জেলিফিশের সাথে লাগছে। এতে অনেকে গা চুলকিয়ে ক্ষত হচ্ছে বলে জেনেছি। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে লাবণী-সুগন্ধা ও কলাতলী বিচ পয়েন্ট থেকে মৃত জেলিফিশ সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

উল্লেখ্য, এর আগে মৃত ডলফিন ও তিমি এবং মরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে এসেছিল। এবার ভেসে এলো মৃত জেলিফিশ।

আরও পড়ুন