২৪ অক্টোবর ২০২৫

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের মহাসমাবেশে জনস্রোত, মুখর শাহবাগ

নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণহত্যার বিচার এবং জুলাই সনদ কার্যকরের দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থকের ঢল নামে। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই শাহবাগ, টিএসসি ও আশপাশের এলাকাগুলো নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।

শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢলে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে সমাবেশস্থল। ভোর ৫টার দিকেই পুরো উদ্যান জনসমুদ্রে রূপ নেয়।

সমাবেশে অংশ নিতে আগত অনেকের পরনে দেখা গেছে দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ খচিত টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ও মাথায় ক্যাপ। কারো হাতে ছিল দলীয় পতাকা ও ব্যানার। ঢাকায় এসে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করছেন।

সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে দলটির ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এর মধ্যে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে হাইকোর্ট, শাহবাগ ও মৎস্যভবন এলাকায়।

মৎস্যভবন এলাকায় দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান মাসুদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, “সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মীদের গেট চিহ্নিতকরণ, দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় আমরা দায়িত্ব পালন করছি। পুরো ঢাকা শহরে আমাদের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সক্রিয় রয়েছে।”

সমাবেশ সফল করতে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

সাত দফা দাবি-
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা,২. দেশে সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার করা,৩. প্রয়োজনীয় মৌলিক সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন,৪. ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র কার্যকর করা,৫. ২০২৪ সালের ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন,৬. সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা এবং৭. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্কের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জামায়াতের এই সমাবেশ। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর আগে বিএনপির সঙ্গে যৌথভাবে কিছু সমাবেশে অংশ নিলেও এককভাবে এটিই তাদের প্রথম সমাবেশ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

এই সমাবেশের মাধ্যমে মূলত অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নিজেদের শক্তিমত্তার বার্তা দিতে চায় দলটি।

৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর এটি হচ্ছে জামায়াতের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেউ কেউ এটিকে নির্বাচনপূর্ব কৌশলগত অবস্থান হিসেবেও দেখছেন। জামায়াত বলছে, এটি শুধু দলীয় সমাবেশ নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবির প্রতিচ্ছবি।

ট্রেন ও লঞ্চ ছাড়াও ভাড়া করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বাস। সমাবেশে ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সমাবেশস্থলে থাকবে ১৫টি মেডিকেল বুথ, ১৫টি পার্কিং স্পট এবং সমাবেশ বাস্তবায়নে গঠিত হয়েছে ৮টি উপ-কমিটি।

শনিবার বেলা ২টায় মূল সমাবেশ শুরু হবে। তবে সকাল ১০টা থেকে জামায়াতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ইসলামী দল ও রাজনৈতিক দলের নেতা, জুলাই শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুন