২৫ অক্টোবর ২০২৫

‌‘স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে’ জুতা পেটা করলেন স্বামী!

পেশাগত কাজে স্বামী আদালতে ব্যস্ত। এ সুযোগে পূর্ব পরিচয় সূত্রে স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়ান জিকু নামের এক যুবক। ঘটনা প্রকাশ পাবার পর আইনজীবী স্বামী ও গৃহিণীর সংসারে চরম অসন্তোষ নেমে আসে। কঠিন শাসনেও দমেনি পরকীয়া, বরং বেড়েছে অনৈতিক সম্পর্কের টান। সবার অগোচরে দু’জন এলাকা ছাড়েন মাস চারেক আগে। একসপ্তাহ পর চট্টগ্রাম হতে তাদের খুঁজে ফিরিয়ে আনা হয় এলাকায়। স্থানীয় মেম্বারসহ সালিসের মাধ্যমে এ অনৈতিকতা আর হবে না, প্রতিজ্ঞায় দু’সন্তানের দিকে তাকিয়ে সংসার রক্ষা হয় গৃহিণীর। এসব জেনে আত্মহত্যা করতে চান জিকুর সরকারি কর্মকর্তা স্ত্রী। এরপরও থামেনি, অভিসার। মোবাইলে নিয়মিত আলাপনের যোগাযোগ ধরা পড়ে আইন কৌশলী স্বামীর হাতে। অতিষ্ঠ স্বামী আলোচনার কথা বলে ফোনে যোগাযোগ করে ‘পরকীয়া প্রেমিক’কে জনসম্মুখে ‘জুতা পেটা’ করে মনের ক্ষোভ ঝাড়লেন। এমনটি জানালো ওয়াকিবহাল মহল।

শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাজারের কালীমন্দির এলাকার কুলিং কর্নারে ‘জুতা পেটার’ এ ঘটনা ঘটেছে। রাতে ঘটনাটি প্রকাশ পাবার পর সনাতনী সম্প্রদায় ও বাজারের ব্যবসায়ী এবং নানা পেশার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

অভিযুক্ত জিকু দাশ সুব্রত (৪০) ঈদগাঁওর জালালাবাদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বাজারের বাঁশঘাটা এলাকার প্রয়াত সুনীল দাশের ছেলে। তিনি ঈদগাঁও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সনাতন ধর্মাবলম্বী একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসন্ন জন্মাষ্টমী পূজা উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাজারের কালীমন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক প্রস্তুতি বৈঠক ছিল। এসময় ঈদগাঁওর পালপাড়ার বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী (সঙ্গত কারণে নাম গোপন রাখা হলো) অভিযুক্ত জিকু দাশকে ফোন করেন। জিকু কালীমন্দিরে আছেন জানিয়ে তাকে (আইনজীবীকে) সেখানে আসতে বলেন। আইনজীবী তার শ্যালকসহ মোটরসাইকেল যোগে সেখানে এলে জিকু তাদের মন্দির এলাকার আপনের কুলিং কর্ণারে নিয়ে যান।

এসময় জিকুর কারণে তাদের (আইনজীবীর) সংসারে অশান্তি কাটছে না উল্লেখ করে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে জিকু দাশকে জুতা পেটা শুরু করলে জিকুও আইনজীবীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যরা দৌঁড়ে এসে তাদের নিবৃত্ত করে দু’জনকে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলের বাসায় নিয়ে যান।

কুলিং কর্ণারের মালিক আপন দে বলেন, আমার দোকানের ভেতর নয়- সামনে আইনজীবী ও জিকু দাশ হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। কি কারণে এ অনাকাঙ্খিত ঘটনা আমি বলতে পারবো না।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিক্ষুব্ধ স্বামী ওই আইনজীবীর মুঠোফোনে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে যোগাযোগ করা হয়। বার বার রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঈদগাঁও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জিকু দাশ সুব্রত মুঠোফোনে বলেন, আমার সাথে কথা আছে বলায় তাকে (আইনজীবী) মন্দির এলাকায় আসতে বলি। এলে আপ্যায়নার্থে ওনি ও তার শ্যালককে কুলিং কর্ণারে বসার প্রস্তাব দিয়ে আমি আগে হেঁটে ভেতরে ঢুকি। বসতে যাবো এসময় আমার কারণে ওনাদের সংসারে অশান্তি কাটছে না উল্লেখ করে- তিনি (আইনজীবী) আমায় পেছন থেকে অকস্মাৎ ঘুষি মারেন। আমি বার বার বলে আসছি ওনার স্ত্রীর সাথে আমার পরকীয়া নেই। এমনিতে মাঝে মাঝে কথা হয়। তাকে নিয়ে আমি পালিয়ে যায়নি বা বিয়েও করিনি। এটা তিনি মানতে নারাজ।

তিনি আরো জানান, ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী আমার বন্ধু। তাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানানোর পর, লোক পাঠিয়ে তিনি আমাদের তার বাসায় নিয়ে যান। আমার গায়ে হাত তোলার উপযুক্ত কারণ প্রমাণ করতে না পারায় আইনজীবীকে তিরস্কার করেন চেয়ারম্যান। এ নিয়ে সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতারাসহ বৈঠকের সিদ্ধান্তে আমরা যে যার বাড়ি চলে আসি। তার স্ত্রীর সাথে আমার পরকীয়া প্রমাণ করতে পারবে না। তাকে হেনস্তা করতেই এমন কান্ড করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঈদগাঁও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি মৃণাল আচার্য্য বলেন, এসব বিষয়ে নানাজনের কাছ অনেক কথা শুনেছি- তবে, আমার সেক্রেটারি বা মেয়ের স্বামী উদ্যোগী হয়ে কিছু না বলায় এদের ভেতর ইন্টারফেয়ার করিনি। গতরাতের ঘটনাটিও আমার সম্প্রদায়ের লোকজনের মারফত জেনেছি, উভয় পক্ষের কেউ আমায় জানায়নি। এটা খুবই অনভিপ্রেত।

ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন, যেহেতু দু’পক্ষই সনাতন ধর্মাবলম্বী- আর দু’পক্ষেরই সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। তাই, এ সম্প্রদায়ের নেতাদের উপস্থিতি ও তাদের দেয়া সময়ে বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। তখন, আসল ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে।

আরও পড়ুন