স্থায়ী করনের দাবিতে কঠোর আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা। আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণে কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন রেলওয়েতে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকরা।
এদিকে অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন সমায়িকভাবে স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। যা গত ১৬ জুলাই থেকে স্থাগিত ছিলো।
গত ১৬ জুলাই রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী টিএলআর খাতে ৬ মাসের বাজেট বরাদ্দ দিয়ে অব্যাহতি প্রাপ্ত শ্রমিকদের দ্রুত পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট ও পুনর্বহালের কোন চিঠি প্রেরণ করা হয়নি। যদিও গত ১০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলসচিবের মাধ্যমে আউটসোর্সিং সেবা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।’
শ্রমিকরা বলেন, গত ৩ মাস বেতন ও চাকুরী নেই। তাও শ্রমিকেরা কাজ করে যাচ্ছে, প্রশাসন চাকুরী করাচ্ছে কিন্তু কোন সমাধান দিচ্ছে না। আমাদের পরিবার কিভাবে চলবে এটা কি তারা বুঝে!
৮ আগস্ট রেলমন্ত্রী চাকুরী স্থায়ীকরনের বলেন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তার কোন উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক প্রতিনিধি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকারি গেজেটের আলোকে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকদের স্থায়ীকরনের প্রজ্ঞাপন জারী করে। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়, প্রায় ৭০০০ অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে পশ্চিমাঞ্চলের ৯০ জন গেইট কিপারের স্থায়ীকরনের জন্য কমিটির সুপারিশসহ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে। কিন্তু অজানা কারনে ২০২২ সালে এসে তা হটাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শরু করেন আউটসোর্সিং পদ্ধতির পায়তারা যা ৭০০০ শ্রমিকের প্রায় ৪০,০০০ সদস্যের পরিবারের সাতে প্রতারনার সামিল।
তিনি আরও বলেন, ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকদের চাকরী স্থায়ীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ৬ মাসের বাজেট বরাদ্দসহ বিগত দিনে অব্যাহতি প্রাপ্ত সকল শ্রমিকদের পুনর্বহাল না করা হলে সকল অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকরা আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অবস্থান কর্মসূচী পালন করবেন। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন হলে সে দায় কোন শ্রমিক নিবে না এর সম্পূর্ণ দায়ভার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
শ্রমিক প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ১৬ জুলাইয়ের পর বারবার গিয়েছি আলোচনা করেছি আমরা শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছু পাইনি।
আরেক শ্রমিক প্রতিনিধি মো শাওন বলেন, আমরা ১০ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রেলপথ মন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন সচিব, রেলসচিব সহ রেলওয়ে মহাপরিচালককে স্বারকলিপি আকারে আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরনের প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করি।
গেইট কিপার মো রফিকুল ইসলাম বলেন- এতোটা বছর রেলে শ্রম দিলাম এখন আমাকে বাদ দিলে আমি সহ আমার সকল শ্রমিক ভাইয়েরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো? আমাদের যাওয়ার মতো কোন অবস্থা নেই এতো কন্নায় রেলমন্ত্রীর মন গলে না। তারা আমাদের ন্যাহ্য অধিকার দেয় না।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসেই গত ১৬ই জুলাই আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকেরা। কোন সমাধান না পাওয়ায় ২০ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রী, রেলওয়ে সচিব, রেলওয়ের মহাপরিচালককে ২৪ তারিখের মধ্যে কোন সমাধান গ্রহন না করলে শ্রমিকেরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য থাকবে মর্মে স্বারকলিপি প্রদান করেন অস্থায়ী শ্রমিকরা।
অবস্থান কর্মসূচী সম্পর্কে কতটুকু অবগত তা জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, টিএলআরদের এই দাবি যুক্তিসংগত নয়। রেলের নিজস্ব আইন ব্যবস্থা আছে। তারা এইভাবে রেলকে বাধ্য করতে পারে না। তারা রেলওয়ের টেম্পোরারি লেভার।
তিনি উদাহরণ সরূপ বলেন, কারো ঘরে কোনো কর্মচারী বা শ্রমিক রাখলে যতদিন প্রয়োজন ততদিন রাখবেন। কাজ না থাকলে বসিয়ে বসিয়ে কেন বেতন দিবেন?? অস্থায়ী শ্রমিক মানেই কাজ করলে বেতন আর কাজ না করলে তো বেতন নাই।