চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি। দিনভর দফায় দফায় চেষ্টা করেও বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বহিরাগতদের বাঁধার মুখে ফরম সংগ্রহ করতে পারেনি স্বতন্ত্র আইনজীবী প্রার্থীরা। এসময় আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এর কোন সুরাহা না পেয়ে পরে তারা আইনজীবী সমিতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়।
বৃহষ্পতিবার (১০ এপ্রিল) দিনভর চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরীতে এসব ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনা সম্পর্কে তুলে ধরে আইনজীবী মো. আব্দুর রশীদ, ফখরুদ্দিন জাবেদ, মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ও গোলাম মোহাম্মদ কাদের আলী শাহ স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি কতৃক গঠিত চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন গত ৮ এপ্রিল সমিতির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী ১০ এপ্রিল ছিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের দিন। ১১ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম ফমা দেওয়ার তারিখ। সাধারণ আইনজীবীদের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুপুর শোয়া দুইটার দিকে আমরা সমিতির লাইব্রেরী কক্ষে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে যাই। সেখানে আমরা আধাঘন্টা অপেক্ষা করি। মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের চেষ্টা করলে ভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা, তাদের পক্ষের আইনজীবীরা ও বহিরাগত কিছু লোকজন আমাদের লাইব্রেরী কক্ষে প্রবেশে বাধা দেয়। আক্রমনাত্বক শ্লোগান দেয় ও ভেতরে প্রবেশ করলে মারধর করা হবে বলে হুমকী দেয়। পরে লাইব্রেরী ত্যাগ করতে বাধ্য করে।‘
এডহক কমিটিকে জানিয়েও এই বিষয়ে কোন সমাধান পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চিঠিতে লিখা হয়েছে, ‘বিষয়টি আমরা এডহক কমিটিকে অবগত করি। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে এডহগ কমিটির সহযোগিতা চাই। তারা যেহেতু সময় আছে আমাদের আরও চেষ্টা করতে বলে। তবে এডহক কমিটির কেউ আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি হয়নি। তাদের পরামর্শে আরও এক দফা চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হই। এডহগ কমিটি এই বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবে বলে মন্তব্য করেন।‘
দিনভর আইনজীবী ভবনে উত্তেজনা……
তফসিল অনুযায়ী ১০ এপ্রিল ছিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের দিন। ১১ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম ফমা দেওয়ার তারিখ।দেখা যায় দিনভর আইনজীবী ভবনে মুর্হুমুর্হু স্লোগান। থেমে থেমে আদালতের বিভিন্ন প্রাঙ্গনে স্লোগান উঠে। সর্বশেষ বিকেল চারটায় নমিনেশন জমা দেওয়ার শেষ করেন বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কয়েকজন। তাতেও তারা ব্যার্থ হন। এরপর এডহক কমিটির কাছে গেলে তারা সেখানে তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। পরবর্তীতে অভিযোগ পত্র জমা দিয়ে আইনজীবী লাইব্রেরী স্থান ত্যাগ করেন।
যা বললেন এডহক কমিটির আহ্বায়ক……
এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এডহক কমিটির আহ্বায়ক এ.কে.এম মকবুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ আমরা নির্বাচিত নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন তো স্বাধীন, আমরা তো তাদের কিছু বলতে পারি না। মনোনয়ন ফরম নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি। আমরা রিকুয়েস্ট করেছি তাদের আবেদন গ্রহণ করতে।‘
এসব বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি-পন্থী প্যানেল থেকে সভাপতি পদ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
এর আগে ফেব্রুয়ারীতে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ছয়দিন আগে নির্বাচন কমিশনের সব সদস্য পদত্যাগ করেন। ওই নির্বাচনে শুরুতেই আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার দাবি তুলে এক পক্ষের আইনজীবীরা। পরে আওয়ামীপন্থীরা কোন প্যানেল ঘোষণা ছাড়াই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে এটি নিয়েও আপত্তি ছিল প্রতিপক্ষের আইনজীবীদের। কয়েকজন সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিনই আদালতপাড়ায় বহিরাগতদের মিছিল চলতে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় অপারগতার কথা জানিয়ে দায়িত্ব ছাড়েন কমিশনের সকল সদস্য। ১৩২ বছরের পুরানো চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিতে এমন ঘটনা একেবারেই নতুন। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারী সমিতির সাধারণ সভায় একটি এডহক কমিটি করে দেওয়া হয়। তারা দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এএস/বাংলাধারা