মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
স্বপ্নের রেল লাইনে যোগ হচ্ছে কক্সবাজার। শুধু চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার নয়, সাব লাইনে যুক্ত হবে ঢাকা ও সিলেট। ঢাকা-সিলেট রেল রুট যদি বৃত্তাকার চেইনের মতো হয় সেখানে কক্সবাজার হবে লকেটের মতোই এমন প্রত্যাশা কক্সবাজারবাসীর। কত স্বপ্ন ছোঁয়ার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলছে বর্তমান সরকারের নীল নক্ষত্র ও বঙ্গবন্ধু কন্যা তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সরকারই কেবল অসাধ্যকে সাধন করছে নানা মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমান সরকার পিছিয়ে নেই, চলছে উন্নয়ন, হচ্ছে উন্নতি বিশ্বের মানচিত্রে আস্তে আস্তে আমরাই সেরা হয়ে যাচ্ছি এমনটি জানালেন কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের পরিচালক ও প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।

স্বপ্ন শিখরে এখন বাংলাদেশ। ১৮ হাজার কোটি টাকায় স্বপ্ন ছুঁয়ে দিতে সৈকত সিটি কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য ট্রেন যাবে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যেই। আবার কক্সবাজারের আন্তর্তাজাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে সাগরে নির্মাণের মত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। সমুদ্রে রানওয়ে আর কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মতো ঘটনা শুধু কক্সবাজারে পর্যটকদের টার্গেট করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমারোহ ঘটাতে সরকার এখন বদ্ধ পরিকর। বর্তমান সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন এদেশের স্বপ্নস্রষ্টা। তাঁর সমস্ত স্বপ্ন যেন বাস্তবের টার্গেট নিয়ে দৌড়াচ্ছে বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।
স্বাধীনতার পর জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) কর্তৃক ১৯৭১ সালে রেল লাইনটির সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জাপানের জেআরটিএস ১৯৭৬-৭৭ সালে ডাটা সংগ্রহের কাজ সংগ্রহ করে। ১৯৯২ সালের এপ্রিলে “এশিয়ান ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট (আলটিভ)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্টাডিকৃত ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) নেটওয়ার্কের তিনটি ইউরো-এশিয়ার সংযোগ রুটের মধ্যে সাউদার্ন কোরিডোরে অন্যতম রুট। ১৯৯৫ সালে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে(টিএআর) সাউদার্ন কোরিডোর-১ এর উপর প্রাথমিক স্টাডি পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ টিএআর নেটওয়ার্কে সাউদার্ন করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত হবে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের লিংক এর ১নং রুট হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রেল স্টেশন গেদে হয়ে বাংলাদেশের দর্শনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে জামতলী পৌছাবে ট্রেন। এরপর জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী হয়ে আখাউড়া জংশন স্টেশনে পৌছাবে ট্রেন। আবার সিলেট থেকেও আখাউড়া পর্যন্ত আসা ট্রেন জংশন স্টেশনে থামবে। এরপর কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ট্রেন চট্টগ্রাম জংশনে পৌছাবে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকেই সিলেট ও ঢাকা থেকে আসা ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করতে একসঙ্গে যুক্ত হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেন দোহাজারী হয়ে রামু পৌছাবে। এরপর রামু জংশন থেকে কক্সবাজার আবার রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম হয়ে মায়ানমারের বর্ডার স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবে।

এদিকে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ১০১ কিমি.। প্রথম পর্যায়ে ১০১ কিমি. রেল লাইন স্থাপন হবে। ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন এর সঙ্গে সাব রুট হিসেবে যুক্ত হবে টঙ্গীসহ ঢাকা। সিলেট সাব রুট হিসেবে যুক্ত হবে আখাউড়া ও কূলাউড়া রেল স্টেশন। কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর হয়ে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে(টিএআর) চলে যাবে ভারতের মহিশ্বশাণ স্টেশন পর্যন্ত। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে(টিএআর) এর দ্বিতীয় রুট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গাবাদ স্টেশন পর্যন্ত। আবার রোহনপুর থেকে রাজশাহী হয়ে ঈশ্বরদী স্টেশন পর্যন্ত যাবে ট্রেন। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে(টিএআর) তৃতীয় রুট হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাধিকাপুর থেকে বিরল স্টেশন হয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুর ঢুকবে ট্রেন। এরপর ট্রেন চলবে পার্বতীপুর হয়ে আব্দুলপুর থেকে ঈশ্বরদী হয়ে যুক্ত হবে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাব রুটে।
২০১০ সালের ২২ মে পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী একনেক এর সভায় আরও অবহিত করেন যে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকল্পটির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং এডিবি’র নিকট অনুরোধ জানিয়েছিল। এডিবি কিছু শর্ত সাপেক্ষে অর্থায়নের আশ্বাস প্রদান করে। চীন সরকার হতে অর্থায়নের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ কর্তৃক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং বাস্তবায়নকাল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণের সম্ভাবনা থাকায় প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুলাই এর পরিবর্তে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত নির্ধারণের মতামতসহ প্রকল্পটির সদয় বিবেচনা ও নিতিগত অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বাংলাধারা প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা ও সিলেট কক্সবাজার লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে সাব লাইন হিসেবে। গেদে স্টেশন হয়ে ভারতের সঙ্গেও যুক্ত হবে পর্যটনের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমান সরকার পিছিয়ে নেই, চলছে উন্নয়ন, হচ্ছে উন্নতি।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













