মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
পাহাড় নদী আর সাগরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে গড়া কক্সবাজার। প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের এই লীলাভূমি কক্সবাজার দেখতে ট্যুরিস্টরা ছুটে আসেন কক্সবাজার। কেউ একা আবার কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে। তবে দলছুট বন্ধুরা যেন কক্সবাজারের অর্ঘ্য। রাতভর বাইকে চড়ে তেতুঁলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ছুটে চলে বন্ধুদের দল। তারা ক্লান্ত বা পরিশ্রান্ত নয়, কক্সবাজার পৌছেই প্রথমে ভৌঁ দৌড় দেয় পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। বলার অপেক্ষা রাখে না তাদের আবেগ আপ্লুত ধ্বনি আর চিৎকার চেঁচামেচি। সমুদ্র বিজয় করতে এসেছে তারা।
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে পর্যটকরা আসবে ট্রেনে। এ স্বপ্নটা আর বাস্তবায়নের দিনক্ষন আরে বেশি দূরে নয়। ১৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটি যেন কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে দিবে। মূলত পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটিকেও দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী প্রকল্প দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প দীর্ঘদিনের সমীক্ষার প্রতিফলন। বর্তমান সরকার পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর বাংলাধারা প্রতিবেদককে এমনটিই জানালেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।

খোলামেলা পরিসরে ট্যুরিস্টরা দেখতে চায় প্রকৃতি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে প্রকৃতির কোলঘেঁষে। পাহাড়, নদী কোনটিই বাদ নেই এ রেল লাইনকে ছেড়ে। ট্যুরিস্টদের জন্য চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রথম ধাপের রেল লাইন প্রকল্পে যুক্ত হবে ট্যুরিস্ট কোচ। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারি হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় থাকা গুনদুম পর্যন্ত আরো প্রায় ২৯ কিলোমিটারসহ মোট ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এখন মাটি ভরাট ও ব্রিজ নির্মাণসহ নানা কাজ চলছে। চলছে ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজও। সিঙ্গেল লাইনে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে ট্যুরিস্ট কোচ সম্বলিত ট্রেন।
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) রেলওয়ের করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাই হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারি হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমার সীমান্তের নিকটে থাকা গুনদুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথেও বসানো হবে সিঙ্গেল লাইনে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক। মূলত পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটিকেও দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী প্রকল্প দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পটি মূলত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত তথা ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকতকে ঘিরে এদেশে পর্যটন শিল্পকে উন্নয়নের দ্বারে পৌছে দেয়ার টার্গেট। পর্যটনে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করার সময়টুকু পার হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সে অনুযায়ী পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হয়নি কক্সবাজারে। একমাত্র সড়ক পথ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তবে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান চলাচল করলেও তা বিভিন্ন সময়ে বন্ধ থাকে। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে শুধু নয়, সিলেট ও ঢাকা থেকেও কক্সবাজার ছুটে যাওয়ার সুযোগ থাকবে পর্যটকদের। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
মহাসড়কের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে মাছ, লবণ ও রাবারের কাঁচামাল এমনকি বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন হয়ে থাকে। এ রেল লাইন প্রকল্প চালু হলে শুধুমাত্র পর্যটক বা জনসাধারণের জন্য ট্রেন চলাচলই নয়, লাগেজ ভ্যানও লাগানো হবে পণ্য পরিবহণে। এক্ষেত্রে এককভাবে অথবা আলাদাভাবে পণ্য পরিবহনে লাগেজ ভ্যান পূর্ণাঙ্গ ট্রেনেও রূপ নিতে পারে। কিন্তু পণ্য পরিবহণের লাগেজ ভ্যান যদি পর্যটকদর ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয় সেক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটকদের। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের যেসব স্থানে রেল লাইন বাস্তবায়ন হয়েছে প্রতিটি স্থানে রেলের সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে পণ্য পরিবহণ থেকে। যেহেতু চট্টগ্রাম, কক্সবাজার রেল রুটে শুধু দেশি পর্যটকই নয়, বিদেশী পর্যটকও থাকবে। সেহেতু কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে লাগেজ ভ্যান যুক্ত করবে না এমন প্রত্যাশা পর্যটকদের।

এদিকে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ রেল নেটওয়ার্ক হিসাবে বিবেচিত হবে, যা আঞ্চলিক, উপ আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রোড বলে গণ্য হবে। চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ এর মধ্যে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের এ ট্র্যাকটি তিনটি দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করবে। অধিকতর দেশি ও বিদেশী বিনিয়োগ সহজতর হবে। আঞ্চলিক অথবা উপ আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশই দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে স্বর্ণদুয়ারে রূপান্তরিত হবে। ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এমনকি বাংলাদেশে বিনিয়োগে গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি এবং দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু হয়ে মিয়ানমারের গুনদুম পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটার রেল লাইন প্রকল্পের মধ্যে দোহাজারি পর্যন্ত আগে থেকেই রেল ট্র্যাক নির্মাণ হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে এবং এ রুটে দোহাজারি পর্যন্ত রেল স্টেশনগুলোতে রিমডেলিং করা হয়েছে। কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দোহাজারি থেকে সিঙ্গেল লাইনে ডুয়েল গেজ ট্র্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই পর্যটক সিলেট, ঢাকা সাবসিডিয়ারি শাখা লাইন হিসাবে চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত চলে যাবে যাত্রী বা পর্যটকরা।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বাংলাধারা প্রতিবেদককে বলেন, শুধু পর্যটকদের উদ্দেশ্যেই নয়, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দুটি পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। চট্টগ্রাম থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প দীর্ঘদিনের সমীক্ষার প্রতিফলন। বর্তমান সরকার পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর শুধু পর্যটন খাতই বিকশিত হবে না, রেলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













