২৩ অক্টোবর ২০২৫

দ্বীপবাসীর প্রাণের দাবি পূরণ করে শুরু হয়েছিল ফেরি চলাচল, ২৪ দিন না যেতেই ‘আবহাওয়ার অজুহাতে’ বন্ধ ঘোষণা

স্বপ্নের ফেরি থেমে গেল মৌসুমী ঝড়ে, সিন্ডিকেটের গন্ধে ফুসছে সন্দ্বীপবাসী

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। যার নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে অপার সম্ভাবনা, অথচ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। একমাত্র ভরসা ছিল নৌযান, যার ভঙ্গুর নিরাপত্তা ও অনিয়মের চিত্র বহুবার মৃত্যু ডেকে এনেছে দ্বীপবাসীর জীবনে। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২টি প্রাণ ঝরে গেছে এই অনিরাপদ যাতায়াতে।

এই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে গত ২৪ মার্চ চালু হয় বহুল প্রত্যাশিত ‘কপোতক্ষ’ফেরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, সন্দ্বীপের সন্তান ফওজুল কবির খানের একক প্রচেষ্টায় এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই ফেরি যেন বয়ে আনতে থাকে নতুন সম্ভাবনার হাওয়া। একসময় স্বপ্ন ছিল যে, চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে গাড়ি নিয়ে সন্দ্বীপ পৌঁছানো, সেটাই হয়ে ওঠে বাস্তবতা।

কপোতক্ষ ফেরির প্রথম যাত্রার দিন ,আনন্দে উদ্বেল দ্বীপবাসী

কিন্তু এই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ফেরি চালুর মাত্র ২৪ দিন পরই আসে দুঃসংবাদ‘মৌসুমি আবহাওয়া খারাপ’এই অজুহাতে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিসি। এমনকি ফেরিটিকে সরিয়ে অন্য রুটে পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক(বাণিজ্য) আব্দুর নুর তুষার বাংলাধারাকে জানান, “প্রতি বছর এপ্রিল ১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ১৫ পর্যন্ত সাগর উত্তাল থাকে। কপোতক্ষ সমুদ্র উপযোগী নয়, তাই এই সময়ে ফেরি চলবে না।”

ফেরি বন্ধের ঘোষণায় উত্তাল সন্দ্বীপ

এই ঘোষণায় দ্বীপজুড়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। সন্দ্বীপের মানুষ সরাসরি অভিযোগ তুলছেন- এটি শুধু আবহাওয়ার বিষয় নয়, এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়, দ্বীপবাসীর দাবির কেন্দ্রে একটাই কথা -“ফেরি বন্ধ থাকলেও এটি যেন অন্য রুটে পাঠানো না হয়। সন্দ্বীপেই নোঙর করে রাখা হোক, আবহাওয়া ভালো হলে আবার চালু হোক।”

সন্দ্বীপের সমাজকর্মী ফাহাদ চৌধুরী বলেন, “আমরা আবহাওয়ার ব্যাপার বুঝি। তবে এমন তো না যে এখনই ফেরি চলার অনুপযুক্ত সময়। বরং মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দ্বীপবাসীকে ফের অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয়া।”

সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সভা, ফেরি চলবেই, চলতেই হবে

আজ সোমবার সন্ধ্যায় সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক প্রতিবাদ বৈঠকে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফয়সাল বলেন, “এটি স্পষ্টতই সিন্ডিকেটের চক্রান্ত। অতীতেও এর চেয়েও খারাপ আবহাওয়ায় ফেরি চলেছে, এখন কেন বন্ধ?”

বিআইডব্লিউটিসি অবশ্য এসব দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আব্দুর নুর তুষার বলেন, “ফেরি তো আর ২-৩ মাস এভাবে পড়ে থাকতে পারে না। অন্য রুটে ব্যবহার করা প্রয়োজন।”

তবে দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন, সরকার যদি এই রুটে ফেরি চালিয়ে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে, তাহলে কিভাবে এটি লাভজনক নয় বলা হয়? এরই মধ্যে, আগামীকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপে আমরা সন্দ্বীপবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন আহ্বান করা হয়েছে।

বাংলাধারা/এআরই

আরও পড়ুন