সম্পাদকীয়
দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। এখন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের।
এই টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্যই নয়, সারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রসমূহ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান প্রভৃতি স্থানে পর্যটকের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। প্রথম বছরে এ টানেল দিয়ে ১৭ হাজারের বেশি গাড়ি পারাপার হবে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মিরসরাই ইকোনমিক জোনের যোগাযোগ স্থাপনে সেতুবন্ধন হবে চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের সঙ্গে সম্মিলন ঘটিয়েছে টানেল। এই টানেল কেন্দ্রকে করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। ঘাঁটি গাড়ছে ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পর্যন্ত শিল্পায়ন ও পর্যটনের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে শিগগিরই একটি ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। এই টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। সহজ শর্তে শিল্প প্লটসমূহকে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে দ্রুত বরাদ্দ প্রদান করে নিশ্চিত করতে হবে সব অবকাঠামোগত সুবিধা। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য বেসরকারি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ দক্ষিণ প্রান্তে শিল্পায়ন হলে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল আরও বাড়বে।
এছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বে-টার্মিনাল প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেইন মহাসড়ক, কুমিল্লা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম প্রকল্পসহ এ অঞ্চলে যেসব মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক ১০টি মেগা প্রকল্পের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি। তাহলে আমাদের কাক্সিক্ষত সাফল্য আসবে।
এ টানেল নিয়ে চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর প্রথম নির্বাচনের ইশতেহারেও টানেল নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল, কারণ দেশের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৭০ ভাগ আসে এ কর্ণফুলী নদী থেকে। চট্টলবীরের সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমরা মনে করি, পদ্মা সেতুর পর দেশের আরেকটি বড় অর্জন হবে এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম পাতালপথ। এ টানেল আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা রাখছি।