বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দ্বীপের শত শত শিক্ষার্থী। আগামীকাল শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টায় সারাদেশে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীদের অনেকেই চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় উপকূলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুপ্তছড়া ঘাট থেকে কাঠের তৈরি একটি নৌযানে ৪০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন প্রবাসী যাত্রী চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেও দেড় ঘণ্টা সাগরে ভেসে থেকে প্রবল ঢেউ ও স্রোতের মুখে ফিরে আসতে হয় তাদের। নৌঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবহাওয়ার উন্নতি না হলে শুক্রবার রাত বা শনিবার সকালেও কোনো নৌযান ছাড়বে না।
শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে বুক বেঁধে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রওনা দেন। সুমন মিয়াজী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন,“এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে পরীক্ষা না পেছালে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে যাবে। দেড় ঘণ্টা ধরে সাগরের বুকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল বুঝি আর ফিরতে পারবো না।”
সালমান রিজভী নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “তখনো ওয়েদার মোটামুটি অনুকূলে ছিলো। প্রায় ২০ মিনিট বোট চলার পর শুরু হয় প্রবল বাতাস। এ বাতাসে বোট ধুলতে ধুলতে কিছুদূর যাওয়ার পর বোটের মাঝি আবার সন্দ্বীপের দিকে ব্যাক করতে বাধ্য হয় ( ওই মাঝি জীবনে প্রথম বার বোট মাঝপথ থেকে ব্যাক দিসে)।এ যাত্রা ভুলবো না কখনো!পরশুদিন পরীক্ষা, জানিনা পরীক্ষার আগে চট্রগ্রাম যাইতে পারবো কিনা।আমরা সন্দ্বীপবাসী, আমাদের কপালে এইসব ই আছে।”
আরেক শিক্ষার্থী বলেন,“চেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লড়াইয়ে নামবো, কিন্তু সাগরের মাঝে এসে মনে হচ্ছিল—এই বুঝি জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা কম। শনিবার বা রোববার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন,“প্রায় এক যুগ পর আগামীকাল ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৫ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।”
তিনি আরও বলেন,“পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রশ্ন ও ওএমআর শীট ইতোমধ্যেই কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। তবে উপকূলীয় বা দ্বীপ অঞ্চলে যেসব শিক্ষার্থী বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।”
এই ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে প্রকৃতপক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় সেই পরীক্ষা কবে ও কীভাবে হবে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসেনি।
সাগরের বুকে ভাসতে ভাসতে যে স্বপ্নভরা চোখগুলো আজ দ্বিধায় ভুগছে, তাদের প্রশ্ন একটাই—“বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে জীবন বাজি রেখে রওনা দিয়েছি, এবার কি স্বপ্নটা একটু ধরা দেবে?”
ইমন/বাংলাধারা