৩১ অক্টোবর ২০২৫

স্বাগত নয়া মেয়র আপনাকে

সম্পাদকীয়  »

পাহাড়, সাগর ও সমতল- এ তিনের সমন্বয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ৬০ বর্গমাইল আয়তনের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদটির হাল আমলে গুরুত্ব কমেছে অনেক। সবশেষ দুই মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মনজুর আলম মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাননি। এর পরও চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রশাসনের সবচেয়ে জৌলুসপূর্ণ পদটির নাম মেয়র। বীর চট্টলাখ্যাত এ নগরের এবার মেয়র নির্বাচিত হলেন, নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। স্বাগত নয়া মেয়র আপনাকে। চলমান করোনাকালের মতো চরম দুঃসময়ে নগরপিতার আসন জয় করলেন।

এই প্রথম ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর ভোটের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে মেয়র এবং ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ২২৬ জন। এর মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন ১৬৯ জন। তাদের মধ্য থেকে নাগরিকরা পেয়েছেন একজন নতুন নগরপিতার সাথে ৪১ জন কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। নির্বাচিত এসব নতুন কাউন্সিলরদের জন্যও আমাদের শুভ কামনা। নির্বাচিত সবার সাফল্য কামনা করি আমরা।

এবার চসিকের ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮। ভোট নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন ৭৭৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং অফিসার। নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে পাহারায় ছিলো ৭ হাজার ৭৭২ জন পুলিশ সদস্য। তারপরও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

এবারও নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটাররা প্রত্যাশা করছেন তাদের নিত্য সমস্যাবলি, যেমন গ্যাস সঙ্কট, যানজট, পানি সঙ্কট, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মাদক ও সন্ত্রাস দমন, আবর্জনা ও মশা নিধন, বিলবোর্ড অপসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন, অপরিকল্পিত ভবন চিহ্নিতকরণ এবং অপসারণ ইত্যাকার সমস্যাদি সমাধানে মেয়র এবং কাউন্সিলররা তাদের দেয়া সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করবেন।

এবার রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়েই মেয়র-কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের মনে রাখা দরকার নির্বাচন নিয়ে যে সব প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠেছে সেগুলো মানুষের মনে স্থায়ী হবে না যদি নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা নির্বাচনের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলো পালনে আন্তরিকতার পরিচয় দেন। তারা কী করবেন, কীভাবে করবেন সে সব পরিকল্পনার কথা নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নগরবাসীকে জানিয়েছেন। এখন নগরবাসী প্রতিদিনই মিলিয়ে দেখবেন নির্বাচনের আগের কথা এবং নির্বাচনের পরের কাজের মধ্যে সঙ্গতি আছে কিনা।

এই নতুন মেয়রের মেয়াদকাল পাঁচ বছর; চট্টগ্রামের প্রতি এই নগরপিতার আন্তরিকতা থাকলে বিপুল পরিবর্তন সম্ভব হবে। পরিবর্তন আনতে হলে নতুন এই মেয়রকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়রের সদিচ্ছা ও দক্ষতার পাশাপাশি পর্যাপ্ত উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটিকে অনেকটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। উপহার দেওয়া সম্ভব পরিচ্ছন্ন একটি শহর। নতুন অভিভাবক, চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ নগরী গড়তে কাজ করবেন, এমন আশা নগরবাসীর।

সবশেষে আবারও অভিনন্দন নতুন নগরপিতাকে। আশা রাখি, আপনার আগামী ৫ বছরে বাতাসে থাকবে না ধুলাবালি, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হবে না নগরবাসী, গণপরিবহনে যেন থাকে শৃঙ্খলা, সেবা সংস্থাগুলোতে থাকবে কার্যকর সমন্বয়, ফুটপাত হবে ব্যবহারের উপযোগী, গড়ে উঠবে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরবাসী উপহার পাবে মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ। এমন অনেক প্রত্যাশাগুলোর বাস্তবায়নের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম শহরবাসী। আশা করি, নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে আপনি ব্যর্থ হবেন না।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন