২৩ অক্টোবর ২০২৫

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, রোগী-স্বজনদের দুর্ভোগ

বোয়ালখালী প্রতিনিধি »

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে প্রায় সপ্তাহ ধরে। আবাসিকে ভর্তি পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশু ওয়ার্ডে। বেড সংকটের কারণে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতে ঠাঁই নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা।

শিশু ওয়ার্ডে গত তিনদিন ধরে নিজের শিশু সন্তান নিয়ে রয়েছেন মো. সাদ্দাম হোসেন নামের এক অভিভাবক। তিনি জানান, ছেলের বুকে কফ থাকায় ডাক্তার ভর্তি দিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে বয়স্ক পুরুষদের ভর্তি করানো হচ্ছে। অসহ্য গরমে নাভিশ্বাস উঠছে। ফ্যান দু’টি নষ্ট। বাথরুমের অবস্থা কি বলব, এতই নাজুক। নিজের পকেট থেকে ৫০ টাকা দিয়ে (শুক্রবার) পরিষ্কার করিয়েছি।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষ ওয়ার্ডে ঝুলছে তালা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারি জানান, পুরুষ ওয়ার্ডটি গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। ঠিক কি কারণে বন্ধ তা তারাও জানেন না। সম্ভবত বাথরুমের কাজের জন্য বন্ধ বলে দাবি তাদের। রান্না ঘরের অবস্থাও শোচনীয়।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নার কাজে নিয়োজিত এক মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্যারেরা যেভাবে বলেন- সেইভাবেই রান্না হয়। শুক্রবার (গত) রাতে রোগীদের জন্য ডাল, সবজি, ভাত ও ডিম দেওয়া হচ্ছে।’

মহিলা ওয়ার্ডে বেড উপচে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডের বাথরুমে গামলা ভর্তি বাসি ভাত, এঁটো ও নোংরা আবর্জনায় সয়লাব।

শিশু ওয়ার্ডে পুরুষ রোগী থাকায় শিশুদের মায়েরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। সেবা নিতে আসা আফিয়া আকতার নামে একজন বলেন, ‘রমজানের দিন, গরমও পড়ছে। তার মধ্যে বয়স্কদের সাথে শিশু সন্তান নিয়ে রয়েছি। শিশুদের বুকের দুধ পান করানোর জন্য বেডের চারপাশে কাপড় টাঙিয়ে রাখতে হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পুরাতন ভবনে মহিলা ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ড মিলিয়ে ৩৫টি বেড রয়েছে। নতুন ভবনের পুরুষ ওয়ার্ডে ১৫টি বেড রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন বলেন, ‘পুরুষ ওয়ার্ডের বাথরুমের কাজ চলায় সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের পুরাতন ভবনের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদাররা কাজ শেষ করলেই সেখানে শিফট করা হবে পুরুষ রোগীদের।’

সম্প্রতি আবাসিকে রোগী বেড়ে যাওয়া ৩৪ বেডে সংকুলান না হওয়া মেঝেতেও রোগীদের বেড দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে কবে নাগাদ পুরুষ ওয়ার্ডের কাজ শেষ হবে তা জানা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, সরকার গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। কিন্তু সুফল পাচ্ছে না জনগণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও যথাযথ তদারকি না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। চলছে অনিয়ম, বাড়ছে দুর্নীতি, ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

আরও পড়ুন