২৪ অক্টোবর ২০২৫

স্যামসাং কেয়ারে ঢিমে তেতালা কাজ, গ্রাহকদের সময় যেন ‘হাতের মোয়া’

জিয়াউল হক ইমন »

স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে গেলে দেখা মেলে ‘স্পিডি সার্ভিস, এসিউরড কোয়ালিটি’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড। যার অর্থ দাঁড়ায় দ্রুত সেবা, নিশ্চিত গুণমান। কিন্তু বাস্তব এর পুরোটাই বিপরীত। কেয়ারে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মেলেনা সেবা। যেন গ্রাহকদের সময়ের মূল্যই নেই!—নগরীর ২নং গেইটে অবস্থিত স্যামসাং কাস্টমার কেয়ারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্রই।

গ্রাহকরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসেও ৩-৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় শুধু রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে কথা বলতে। পার্টস না থাকাসহ নানা অযুহাতে দিনের পর দিন ঘোরানো হয় তাদের।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্যামসাং কেয়ারে গিয়ে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী এ কে এম শামসুল আলমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৩ ঘন্টা বসে থাকার পরও সিরিয়াল আসেনি। এত বড় একটা আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সেন্টারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার মানে হয় না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সময়ের মুল্য অনেক বেশী। সার্ভিস সেন্টারে দ্রুত সার্ভিস দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সার্ভিস খুবই স্লো। এভাবে সার্ভিস দিলে প্রতিযোগীতার এই দিনে স্যামসাং কোম্পানি গ্রাহকদের আস্থা হারিয়ে ফেলবে। ভোগান্তির কারণে কাস্টমাররা অন্য ব্রান্ডের মোবাইল ব্যবহারে উৎসাহী হবে।’

তিনি বলেন, ‘সার্ভিস যদি ভাল না হয়, স্বনামধন্য এই কোম্পানি সাসটেইন (টিকে থাকতে) করতে পারবে না। অফিসে সার্ভিস দেওয়ার জন্য ৪ জনের জন্য চেয়ার থাকলেও ১-২ জনের সার্ভিস দেওয়া মানে অপারেশনাল কস্ট কমানো। এভাবে প্রতিযোগী বিশ্বে টিকে থাকতে পারবেনা। শুরু থেকে আমি স্যামসাং ব্যবহার করে আসছি, এভাবে চললে এই কোম্পানির মোবাইল বর্জন করবো।’

চকরিয়া পাওয়ার প্লান্টের দায়িত্বে আছেন কেফায়েত। তিনি তার ব্যবহৃত সেটের সমস্যা সমাধানে এসেছেন চকরিয়া থেকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঢাকার সার্ভিস সেন্টারে এমন ঝামেলা নাই। এখানে এসি চলেনা অনেক গরম পড়ছে প্রায় দেড় ঘন্টা বসে আসি এখনো সিরিয়াল আসেনি। কিন্তু লিখা আছে ‘স্পিডি সার্ভিস’, এসব ভুয়া।

রবিউল হোসেন নামে আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, ‘৩৯ দিন ধরে অপেক্ষায় আছি। ফোন করলে শুধু বলে শীঘ্রই পেয়ে যাবেন, শীঘ্রই পেয়ে যাবেন। কোন নির্দিষ্ট তারিখ কিংবা সময় দেয়নি। এতো নামী-দামি কোম্পানির সার্ভিস সেন্টারের এ কেমন অবস্থা? — প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এসময় দেখা যায়, সার্ভিস সেন্টারে নিয়মিত দায়িত্ব থাকা ইঞ্জিনিয়ার ধীমান দেওয়ান উপস্থিত থাকলেও আবু তালহা নামে আরেকজন ছুটিতে আছেন। তাঁর চেয়ার খালি পড়ে আছে। তালহা’র চেয়ারে বসে অন্য একজনকে মোবাইল ডেলিভারি দিতে দেখা যায়। সেসময় মহিলাসহ অন্তত ১৫ জন সেবা নিতে অপেক্ষায় ছিলেন কেয়ারে। এদিকে ম্যানেজারের রুমটিও ছিল ফাঁকা।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে কেয়ারের ম্যানেজার রাফি আহমেদ শরীফ বলেন, ‘শনিবার বিকেলে ঘটে যাওয়া চেঁচামেচির বিষয় জানার সাথে সাথে আমি কাস্টমার সার্ভিস দিতে আরেকজনকে পাঠিয়েছি। করোনার পর থেকে সরকারি নিয়ম মানতে দুই জনের স্থলে একজনকে বহাল করেছি। স্পীডি সার্ভিস স্লো হয়নি, এ ক্ষেত্রে পাটর্স না থাকায় একজনকে ৩৯ দিনেও সার্ভিস শেষ করতে পারিনি। কিন্তু পার্টস আসা মাত্রই সার্ভিস দিতে বদ্ধ পরিকর।’

ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা নিয়ে ভোগান্তির কারণ জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের সমস্ত সার্ভিস ডাউন হয়ে যায় পাশাপাশি পার্টস স্টকে না থাকলে দ্রুত সার্ভিস দেওয়া অসম্ভব। বিদুৎ না থাকলে সার্ভিসিং বন্ধ থাকে তাই অনেক সময় দ্রুত সার্ভিস পেতে গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হয়।’

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন