অন্যের কাছে হাত পাতা বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নিয়মিত আয়ের উৎসের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারে অবস্থানরত তৃতীয় লিঙ্গে তালিকাভুক্তরা। নিজেদের শ্রমে আয় করা সম্ভব হলে, কারো কাছে হাত না পেতে সুখী জীবন কাটানো সম্ভব উল্লেখ করে অবহেলার দৃষ্টি সরিয়ে সমাজের সকল স্তর থেকে সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
বুধবার (১৪ জুন) কক্সবাজার সৈকত তীরের তারকা হোটেল সী ক্রাউনের হলরুমে কাজ করা দেশের তৃতীয় লিঙ্গের সংগঠন ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’র উদ্যোগে লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি ভাবে কোভিড-১৯’র মতো দূর্যোগকালীন জরুরি তহবিল গঠনের দাবি সম্পর্কিত সংযোগ মিটিংয়ে এসব মতামত তুলে ধরেন তারা।
সম্পর্কের নয়া সেতুর সভাপতি জয়া সিকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই বলেন, সামাজিকভাবে আমরা অবহেলিত। যার কারণে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দিকে হয়রানির শিকারও হতে হয়। স্বাভাবিক জীবনে সবাই এড়িয়ে চলেন বিধায় বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। এটাকে অনেকে চাঁদাবাজি বলে আখ্যায়িত করেন। এ কারণে আমরা চায় সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান। ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নিয়মিত আয়ের উৎসের ব্যবস্থা হলে আমরাও নিজেদের মতো করে সচ্ছল হতে পারবো।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজসেবার উপ-পরিচালক মাসুদ হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহ আহমেদ ফয়সাল, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলী শর্মা, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি কক্সবাজারের রিজিওনাল কোর্ডিনেটর মো. নাজমুল হক, কক্সবাজার রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সায়ীদ আলমগীর ও পিএইচডির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নুরুল কবির প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, জৈবিক চাহিদার উপাদান ছাড়া একজন স্বাভাবিক মানুষের সকল সামর্থ তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের মাঝে বিদ্যমান। তাই হাত না পেতে কাজের মাধ্যমে নিজের জীবিকায়ন করতে হবে। সরকারের সকল বিভাগের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য বরাদ্দ আছে। অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হলে এসব বিষয় সম্পর্কে জানা অসম্ভব। অনেক বিভাগ রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের বরাদ্দ খরচ করতে না পেরে বছর শেষে ফেরত পাঠায়। অন্যজনের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে সকল বিভাগের বরাদ্দ ও কর্মপরিধি জেনে নিজের কর্মসংস্থানের সহযোগিতা নিতে হবে। কোন বিভাগ ন্যায্য সহযোগিতা না দিলে তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর সহায়তা নিতে পারেন।
সম্পর্কের নয়া সেতুর সভাপতি জয়া সিকদার বলেন, গত ২০১০ সালে বাংলাদেশের লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর একটি অলাভজনক, বেসরকারী কমিউনিটি বেইজড সংগঠন হিসেবে সম্পর্কের নয়া সেতুর আত্মপ্রকাশ। রুপান্তরিত নারী, হিজড়া এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষের মানবাধিকার, স্বাস্থ্য সেবা, আইনী অধিকার, পলিসি তৈরীতে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি করছে এ সংগঠন। লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় তরুণদের লিডারশীপ এবং আন্দোলন নিয়ে কাজ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল জটিলতা দূর ও সকলের জন্য বৈষম্যহীন নীতি চালু করার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে এ জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা কর্নার তৈরী করারও দাবি করে আসছে সংগঠন।
সভায় অর্ধশতাধিক লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী, জিও-এনজিও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।












