কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ মারুফ আদনানের বিরুদ্ধে হোটেলে ভাতের বিল না দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির লিখিত প্রতিবেদন শুক্রবার (৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি খাদেমুল বাশার জয়।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হোটেলে ভাতের বিল না দেয়ার অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা বুধবার কক্সবাজারে পৌঁছেন। এরপর তারা অভিযোগকারী, সাক্ষী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য গ্রহণ করে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন তারা।
তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি খাদেমুল বাশার জয় বলেন, আমরা কম্পিউটারে টাইপ করা একটি লিখিত প্রতিবেদন শুক্রবার কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেব। এরপর কেন্দ্রীয় দপ্তর যতটুকু প্রয়োজন মিডিয়াকে ব্রিফ করবেন।
তবে তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া অভিযোগকারী শাহাব উদ্দিন, তার পিতা ওয়াদ আলী ও মাতা রশিদা বেগমের জবানবন্দীর একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
জবানবন্দীতে অসংখ্য মানুষের সামনে অভিযোগকারী শাহাব উদ্দিন বলেন, মারুফের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমার অভিযোগ মেজর (অব.) দেলোয়ারের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। আমি কলাতলীর ওয়ার্ল্ডবীচ হোটেলে হাজী দেলোয়ার ও মেজর (অব.) দেলোয়ারের স্টাফদের জন্য রান্না করি। কিন্তু মেজর (অব.) দেলোয়ারের স্টাফরা আমার হোটেলে খেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিল না দেয়ায় প্রায় ৩ মাস আগে হাজী দেলোয়ারকে আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ দিই। এরপর এতদিন তিনি নিশ্চুপ থাকলেও গত ২৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে কক্সবাজারে এসে আমাকে ডেকে নেন এবং একটি কাগজে দস্তখত করতে বলেন। এরপর আমি আর কিছু জানিনা।
হোটেল ব্যবসায়ী শাহাবউদ্দিন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া ডেইল পাড়ার ওয়াদ আলীর ছেলে।
ওয়াদ আলী বলেন, আমরা বাবা-ছেলে হোটেলটি চালাতাম। শাহাবউদ্দিন গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ৫ মিনিটের জন্য বলে হোটেলের বাইরে যায়। এরপর তার দস্তখত নিয়ে হাজী দেলোয়ার থানায় অভিযোগ করেন। যেখানে মারুফকে আসামী হিসাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অথচ মারুফের বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই।
হোটেল ব্যবসায়ী শাহাবউদ্দিনের মা রশিদা বেগমও তদন্ত কমিটির কাছে একই বক্তব্য দেন।
কলাতলীর ওয়ার্ল্ডবীচ হোটেলের বেসমেন্টে থাকা একটি মেচের মালিক শাহাব উদ্দিন গত ২৭ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ করেন যে, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান গত ৭ মাস ধরে তার কর্মীদের নিয়ে শাহাবউদ্দিনের ভাতের হোটেলে (মেচ) নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে বিল বাকি রেখে চলে যেতেন। সাত মাসে বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বকেয়া টাকা চাইলে হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের মারধর করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার কর্মীরা। এসময় তারা হোটেলের ক্যাশে থাকা ৩০ হাজার টাকাও লুট করেন।
এই অভিযোগ তদন্তে গত সোমবার (২ অক্টোবর) ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি খাদেমুল বাশার জয়কে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রবিউল হাসান রানা, উপ-সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম শাকিল ও আহসান হাবিব সজীব।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মেজর (অব.) দেলোয়ার বলেন, শাহাবউদ্দিন মাসে ১৮ হাজার টাকা ভাড়ায় আমাদের হোটেলের বেসমেন্ট ভাড়া নেয়। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে ভাড়া না দেয়ায় তাকে ভাড়ার জন্য বার বার চাপাচাপি করলে প্রতিপক্ষের ইন্ধনে শাহাবউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ আনে।
অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, আমি শুরু থেকে বলে আসছি- কখনো শাহাবুদ্দিনের মেচে গেছি শুধু সেটা প্রমাণ করতে পারলেও দাবির ডাবল টাকা তুলে দেব। একটি স্বার্থন্বেষী মহল কৌশলে এ অপবাদ ছড়িয়ে আমার পাশাপাশি ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, কলাতলীর ওর্য়াল্ডবীচ হোটেলের মালিকানা ও দখল নিয়ে হাজী দেলোয়ার গং ও মেজর (অব.) দেলোয়ার গং এর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জের ধরে উভয়পক্ষে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পর্যটনে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এ দুই দেলোয়ার। পর্যটনের স্বার্থে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা।













