কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির একটি ফিশিং ট্রলারে এক জালে পাওয়া ৮টি কালো পোপা (স্থানীয় ভাষায় কালো পোয়া মাছ) মাছ ১২ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা দাম হাঁকালেও ৮টি মাছে ৭টিই মেয়ে প্রজাতির হওয়ায় আশানুরূপ দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিশিং ট্রলার মালিকের ভাই একে খান।
এরপরও এক দিনের শিকার করা মাছ বিক্রি করে প্রায় ১৩ লাখ টাকা পাওয়াকে ভাগ্য বলেই গণ্য করছেন ফিশিং ট্রলার মালিক মাতারবাড়ি ইউনিয়নের জালিয়াপাড়ার শহিদুল হক বহাদ্দারের পরিবার।
একে খান বলেন, তার বড় ভাইয়ের মালিকানাধীন এফবি মা-বাবার দোয়া ফিশিং ট্রলারে সোমবার দুপুরে ধরা পড়া ৮টি কালো পোয়া মাছগুলোর দাম হাঁকা হয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। স্থানীয় পাইকার কয়েকজন মিলে মাছগুলো ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। চট্টগ্রামের পাইকাররা আরও বেশী মূল্য দিবে বলায় মাছগুলো সংরক্ষণ করে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিশারি ঘাটের ৪ নম্বর আড়তে গিয়ে পরীক্ষার পর জানা গেছে ৮টি মাছে ৭টি মেয়ে প্রজাতির। এতে পুরুষ প্রজাতির একটি পোয়া ১ লাখ ৭০ হাজার আর বাকি ৭টি ১১ লাখ ১৩ হাজার টাকা দাম পাওয়া গেছে। তবে, ৮টি মাছই যদি পুরুষ প্রজাতির হতো, তবে এসব মাছের দাম মিলতো মিনিমাম অর্ধ কোটি টাকা।
তার মতে, এখন পাওয়া দামেও বেজায় খুশি তাদের পরিবার ও মাঝিমাল্লারা। এলাকার ব্যবসায়ীরা যে মূল্যে চেয়েছিলেন তাদের দিয়ে দেয়া হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়তেন। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য, সেটা আবার প্রমাণ হলো। এ সিজনের মতো খরচ পোষানে সম্ভব হয়েছে। আগের সিদ্ধান্ত মতো বিক্রির একটি অংশ মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা হবে।
ট্রলার মাঝি স্থানীয় আব্দুল মজিদ বলেন, মাতারবাড়ির জেলেপাড়ার শহিদুল হক বহদ্দারের ফিশিং বোট নিয়ে স্থানীয় জেলেরা সাগরে মছ ধরতে গিয়েছিলাম। সোমবার সকালে বঙ্গোপসাগরের জাল ফেলে দুপুরে যখন জাল তুলি, তখন জালে ধরা পড়ে কয়েকটি বড়-ছোট মিলে ৪০-৩০ কেজি ওজনের পোয়া মাছ। আটটি বড় পোঁপা (পোয়া) মাছ বোটে তুলে নিদির্ষ্ট সময়ের আগেই সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে মাছগুলো নিয়ে ফিশিং ট্রলারটি মাতারবাড়ির কুলে ফিরে আসি আমরা। এ ঘটনা বোটে থাকা সকলের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক এনে দিয়েছিল। ঘাটে নৌকা বেঁধে পাড়ায় আসার আগেই উপকূলেই বড় মাছ ধরা পড়ার খবরটি প্রচার হয়ে যায়। স্থানীয় পাইকাররা এসে মাছগুলো কিনতে জড়ো হন। খবর পেয়ে চট্টগ্রামের মাছের আড়তের বড় ব্যবসায়ীরাও মাছগুলো যোগাযোগ করে।
মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হায়দার বলেন, অদৃশ্যের ভাগ্য কখন কিভাবে সুপ্রসন্ন হয় একমাত্র আল্লাহপাক জানেন। শহিদুল বহদ্দারের ভাগ্য খুলেছে। এক জালেই আল্লাহ তাকে ১২ লাখ টাকার সংস্থান করে দিয়েছেন। এর আগেও মাতারবাড়ির উপকূলে গত বছরে সৈয়দ বহাদ্দার ১৫টি এবং পরে আরও ১টি পোয়া মাছ পেয়েছিলেন। যার বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা পেয়েছিলেন।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, এ মাছের মূল আকর্ষণ পেটের ভেতরে থাকা পদনা বা বায়ুথলি (এয়ার ব্লাডার)। এই বায়ুথলি দিয়ে বিশেষ ধরনের সার্জিক্যাল সুতা তৈরি করা হয়।সার্জিক্যাল সুতা তৈরি করা যায় বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মাছের চাহিদা আছে। এ জন্য পোপা মাছের দাম চড়া পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে সেন্টমার্টিনে আবদুল গণি নামে এক জেলে পৃথক দুই সময়ে তিনটি পোয়া মাছ পেয়েছেন। তা বিক্রি করে তিনি প্রায় ৯ লাখ টাকা পেয়েছেন। মাসের শেষ সময়ে এসে মাতারবাড়ির শহিদুল হক বহদ্দারের জালে একসাথেই ৮টি পোয়া মাছ ধরা পড়লো।
আরও পড়ুন :













