৯ নভেম্বর ২০২৫

১৩ বছর ধরে বন্ধ পূর্বাঞ্চল রেলের ল্যাব; জমছে ধুলোর স্তর, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

হাসান সৈকত »

গত ১৩ বছর ধরে যন্ত্রপাতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ল্যাবে। দীর্ঘদিন টানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, জমছে ধুলোর স্তর। অফিসে বসেই অবসর সময় পার করছেন ল্যাবের দায়িত্বে নিয়জিত কর্মকর্তা, কর্মচারিরা।

রেলের জন্য সরবরাহকৃত যাবতীয় মালামালের গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই ল্যাবটি। সরবরাহকৃত মালামাল ব্যবহারের আগে ল্যাবটিতে পরীক্ষার-নিরিক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখন তা আর করা হয় না। কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সরবরাহ হচ্ছে রেলওয়ের মালামাল।

সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে শুধুই অয়েল পরীক্ষা করা হলেও ১৯৬৬ সালের পর ল্যাবের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ক্লথলেদার আর্টিফিশিয়াল, হোস পাইপ, রাবার আইটেম, এম এস শিট, এস এস শিট, এস এস রাউন্ড, হেক্সাগোনাল, স্টিল স্প্রিং সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিং কম্পোজিশন, রং ও বিভিন্ন কেমিক্যালসহ সব ধরনের মালামাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে।

আরও জানা যায়, সরবরাহকৃত সব ধরনের মালামাল এই ল্যাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। ২০১০ সালের পর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার হার কমতে কমতে এখন তা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাংলাধারাকে বলেন, এখন রেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মালামাল নেওয়া হয়। এতে করে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ বাড়ছে। এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বাংলাধারাকে জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুধুই উত্তীর্ণ মালামাল গ্রহণের কথা রয়েছে রেলওয়ের। তবে এখন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না, রেলওয়ে সরাসরি ঠিকাদারদের থেকে মালামাল সংগ্রহ করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ল্যাবে একজন পরিচালক আছেন। পাহাড়তলী লোকশেদ ও মেইন ল্যাব মিলিয়ে ৪ জন কেমিস্টের প্রয়োজন হলেও আছেন ১ জন। এছাড়া ৪ জন সহকারি ল্যাব কেমিস্টের পদেও রয়েছে ১ জন।

সরেজমিনে ল্যাবটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে ল্যাবের প্রতিটি যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে অধিকাংশ যন্ত্রপাতিই পাকিস্তান আমলের। বছরের পর বছর অব্যাবহৃতভাবে পড়ে থাকায় অকেজো হয়ে পড়ছে অনেক কিছুই।

এ ব্যাপারে জানতে ল্যাবের সহকারি পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধান কেমিস্ট সৈয়দ সজীব আহমেদের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ল্যাব নিয়ে কোনোরকম বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

১৩ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস বাংলাধারাকে বলেন, ‘আমি এখানে যোগ দিয়েছি মাত্র একমাস হলো। এখনও ল্যাব পরিদর্শন করিনি। ল্যাবে কী সমস্যা আছে আগে তা জানতে হবে। তারপর সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব’।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ