আলমগীর মানিক, রাঙামাটি »
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলাধীন বাঙ্গালহালিয়ায় গত ৪ ডিসেম্বর জেএসএসে অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপহরণের শিকার উপজেলা ছাত্রলীগের আইনবিয়ষক সম্পাদক সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পুরো উপজেলা।
সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে টানা দুইদিন রাঙামাটি-বান্দরবার রুটে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে স্থানীয়রা। সচেতন নাগরিক পরিষদের ব্যানারে একের পর এক কর্মসূচী ও আল্টিমেটাম দেওয়ার পরেও ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে সন্ত্রাসীরা মুক্তি না দেয়ায় এবং উদ্ধারে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে পিকেটিংয়ে অংশ নিয়েছেন স্থানীয় ইউপির সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিকদলগুলোর নেতৃবৃন্দ।
৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানিয়েছেন, আমরা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছি। অপহরণের পর থেকেই তার সন্ধানে আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর চালাচ্ছি আছি, এখনও তার কোনো খোঁজ পাইনি।
অপহৃত সালাউদ্দিনের ভাই রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফোরকান জানিয়েছেন, আমার ভাইকে উদ্ধারে প্রশাসনের ব্যর্থতা অবশ্যই রয়েছে। আমার ভাইয়ের বিষয়ে তারা এখনও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। যেকোনো উপায়ে আমার ভাইকে ফেরত চাই।
এই অপহরণের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীরাও আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বাঙ্গালহালিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পুলত চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জেএসএসের সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা কেউই নিরাপদ নই। সালাউদ্দিনকে অপহরণের কিছুদিন আগেও একজন গরু ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গেছে, এখনও তার লাশটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে অদ্যবদি পাহাড়ে বেছে বেছে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুমসহ অপহরণ করে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেঝে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের অস্ত্রধারীরা।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মংউ চিং মারমা জানিয়েছেন, সালাউদ্দিনকে যদি সন্ত্রাসীরা ফিরিয়ে না দেয় তাহলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচী পালন করবো আমরা।
ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে গঠিত বাঙ্গালহালিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিলন জানিয়েছেন, সন্তু লারমার জেএসএস এর সন্ত্রাসীদের হাতেই অপহরণের শিকার হয়েছে। জেএসএস সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজি, অপহরনসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতায় স্থানীয় সর্বস্তরের জনসাধারণ চরম নির্যাতনময় পরিবেশে বাস করছে। তাই বাধ্যহয়েই সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতন নাগরিক কমিটি গঠন করে ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচীর দিকে ধাবিত হবো।
এদিকে, উপজেলা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব থাকা ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে অপহরণের পর থেকে অধ্যবদি রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগ, উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে দলীয় ব্যানারে কোনো প্রকার প্রতিবাদ কর্মসূচীতো দূরের কথা সংবাদ মাধ্যমেও নিন্দা না জানানোয় স্থানীয় তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে বাঙ্গালহালিয়ায় হরতালের প্রথমদিনে দেখা গেছে, সকল নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করলেও রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অংসুই চিং মারমা বিজয় জানিয়েছেন, আমরা দলীয় হাইকমান্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগ থেকে নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক পদক্ষেপ নেব।
তিনি জানান, নিখোঁজ সালাউদ্দিনের পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমরা তার খোঁজে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দলীয় ব্যানারে প্রতিবাদ নাজানোর বিষয়টি দলের একটি গ্রুপ রটাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারে সম্ভাব্য সকল প্রকার তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন। তিনি জানান, আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে একাধিক অভিযান পরিচালনা ইতিমধ্যেই করেছি। সকল প্রকার প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।
নিখোঁজ সালাউদ্দিন রাজস্থলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত মজিবুর রহমানের চতুর্থ ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফোরকান হোসেন মুন্না ছোট ভাই, গত ৪ ডিসেম্বর রাজস্থলী উপজেলাধীণ ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন আমতলী পাড়া নামক এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়।
