২৪ অক্টোবর ২০২৫

৩০টি ডিম কোটি টাকার লাভজনক খামারে পরিণত!

জে. জাহেদ, কর্ণফুলী »

টার্কি ভিনদেশী পাখি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের বহু গ্রামের মতো কর্ণফুলীতেও টার্কি পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খাবার হিসেবে মাংসের চাহিদা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ভিনদেশী পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠছে।

গৃহপালিত পাখির মধ্যে টার্কি আমাদের দেশে এখন ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কারণ টার্কি পালনে তুলনামূলক লাভ অনেকটা বেশি। মুরগীর চেয়ে টার্কি আকারে বেশ বড়। এসব খামারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। তেমনি এক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরের ডিভাইন এগ্রো খামার। এটি মূলত ফোর এইচ গ্রুপের একটি খামার প্রকল্প।

২০০৫ সালের দিকে টার্কি পালনের শখে প্রতিষ্ঠানের এমডি গাঁওহার সিরাজ জামিল নগরীর পতেঙ্গা থেকে ৩০টি টার্কির ডিম নিয়ে শুরু করে খামার। পরে ইনকিউবিটর মেশিনের সাহায্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। শুরু হয় টার্কি লালন-পালন, সাথে বিবিধ প্রাণী।

বর্তমানে খামারে এখন প্রায় বিভিন্ন জাতের প্রায়ি ১৪’শ টার্কি, তিতির, সিল্কি মুরগী, সোনালী, কাদারনাত, রাজ হাঁস, কোয়েল পাখি, কবুতর, ফাইটার মুরগী ও দেশি প্রজাতির বহু রঙের মোরগ মোরগী। ২০০৬ সালে বর্তমান ডিভাইন এগ্রো ফার্মটি শুরু হয় কর্ণফুলী ডেইরী ফার্ম নামে। পরের বছরে কর্ণফুলী ডেইরী ফার্ম এন্ড পোল্ট্রি ফার্ম নামে পরিচিত ছিল। সাড়ে ৮ একর জমি জুড়ে বিশাল খামার বাড়ি এখন।

ধীরে ধীরে লাখ টাকা ছাড়িয়ে এখন কোটি টাকার ব্যবসার খামারে পরিণত। যদিও স্থানীয়ভাবে সবাই জানে ফোর এইচ গ্রুপে টার্কি পালন হয় শখের বশে। কিন্তু এখন আর শখ নয়। পুরাপুরি একটি পুর্নাঙ্গ খামারে পরিণত হয়েছে। কেনা আগে ছিল শুধু টার্কি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে খামারে এখন মাছ, মুরগি সাথে দেশি বিদেশী ছোট বড় সাইজের ৯০টি গরু। যার মধ্যে ৩৭টি দুগ্ধজাত গরু প্রতিদিন দুধ দেয়।

সরেজমিনে খামার পরিদর্শনে গেলে কথা হয় ২০০৮ সালে যোগদান করা খামারকর্মী নুরুন্নবী ফরায়েজীর সাথে। তিনি জানালেন, ‘এখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টার্কি কিনতে আসেন শৌখিন ক্রেতারা। তাদের কাছে দাম যা-ই হোক, টার্কি পাওয়া গেছে এটাই বড় বিষয়। তথ্য দেন তিনি, টার্কি একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। মেশিনে ডিম রাখার ২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটে। হ্যাচারি মেশিনে দৈনিক ৫০টি বাচ্চা উৎপাদন হয়।

টার্কি দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমি শাক, বাঁধাকপি ও সবজি-জাতীয় খাবার খায়। চার মাস পর থেকে প্রতিটি টার্কি খাওয়ার উপযোগী হয়। ছয় মাসে এ পাখির ওজন ছয় থেকে সাত কেজি পর্যন্ত হয়। ঠিকভাবে লালন-পালন করা গেলে টার্কির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়। তার খামারে প্রতি কেজি টার্কির মাংস ৩০০ টাকা। গাভির দুধ প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। টার্কির দেড় মাস বয়সী বাচ্চা জোড়া বিক্রি করা হয় ৫০০ টাকা ও ১৫ দিন বয়সী বাচ্চা জোড়া ৪০০/৪৫০ টাকা।’

কৃষিবিদরা জানান, মুক্ত অবস্থায় বা খাঁচায় উভয় পদ্ধতিতে টার্কি পালন করা যায়। মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করলে মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ে। একটি মেয়ে টার্কির ওজন সাধারণত ৫-৬ কেজি আর পুরুষ টার্কির ওজন ৮-১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

খামারকর্মী নুরুন্নবী ফরায়েজী ও আকাশ জানান, সবকিছু মিলে তাদের খামারে এখন প্রতিমাসে আনুমানিক আয় ৮/৯ লাখ এবং বছরে কোটি টাকার উপরে আয় বলে ধারণা করেন।

জানা যায়, উত্তর আমেরিকায় টার্কির প্রথম উৎপত্তিস্থল। ১৭০০ সালে যুক্তরাজ্যে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এ পাখির নতুন জাত উৎপাদন করা হয়। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ পাখি পালন করা হচ্ছে। টার্কির স্বাদ অনেকটা খাসির মাংসের মতো। মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও চর্বি কম থাকায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়; টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়;অন্যান্য পাখির তুলনায় রোগবালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে খামারে ঝুঁকি অনেক কমে যায়; উচ্চম‚ল্য থাকায় খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশি।

বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি মুরগি পালন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন-ব্যবসা করে ভালো মুনাফা অর্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। একটুখানি সচেতনতা, সরকারি গবেষণা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক অংশগ্রহণে এ টার্কিই হয়ে উঠতে পারে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যম এমনকি ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উপায়।

এ ব্যাপারে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন জানান, ‘টার্কি এখনো মুরগি হিসেবে স্বীকৃত নয়। এটি মূলত নিরীহ প্রকৃতির পাখি। এ পাখির রোগব্যাধি কম হওয়ায় অল্প খরচে ও কম সময়ে ভালো লাভ হয়।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম’

আরও পড়ুন