সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
অবশেষে ৩৬ ঘন্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা। হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণের অভিযোগ করে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল হতে কর্মবিরতি পালন করছিলেন ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্যরা।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকে তাদের শাস্তি ও অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনার বিষয়ে পুনঃ তদন্তের আশ্বাসে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করো হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমন সেন।
ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের দাবি, গত ২৬ নভেম্বর হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণের অভিযোগ করেন তারা। শুধু দায়িত্বরত ইন্টার্ণ চিকিৎসক নয়, রোগী এবং তাদের স্বজনকেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি উল্টো হাসপাতালে কর্মরত ৬ ইন্টার্ণ চিকিৎককে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদ সভাপতি মোস্তায়ীন বিল্লাহ তকী, সাধারণ সম্পাদক ইমন সেন, অর্ণব দাশ, মোহাম্মদ হোসাইনের ৩ মাসের বেতন কর্তন করার শাস্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ডা. তরিকুল ইসলাম আবিদের এক মাসের বেতন কর্তনের পাশাপাশি ২ মাস এবং মোহাম্মদ মুস্তফা ইমনকে দুই মাসের বেতন কর্তন ও একমাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের শাস্তির সুপারিশ করেছে ডা. মাহফুজের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।
এ কারণে, ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ঘোষিত শাস্তি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কর্মে ফিরবে না বলে হুশিয়ারী দিয়েছিল ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদ। ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগিদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোগীর স্বজনরা।
এদিকে, কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের দাবি মতো অভিযুক্ত গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানকে পেকুয়া উপজেলায় বদলি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। কিন্তু ছয়জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারিকৃত আদেশ প্রত্যাহার না হওয়ায় শুক্রবারও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখে ইন্টার্ণরা। এ অবস্থা উত্তরণে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি, তত্বাবধায়ক, আরএমওসহ সংশ্লিষ্টরা ইন্টার্ণদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে তাদের শাস্তি ও অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনার বিষয়ে পুনঃ তদন্তের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা সেবায় যোগদেন ইন্টার্ণরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মমিনুর রহমান জানান, কোন এক কারণে ইন্টার্ণ চিকিৎসা ডা. মাহফুজুর রহমানকে তার অফিসের দরজা বন্ধ করে মারধর করে। বিষয়টি জানার পর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন হলে ডা. মাহফুজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্তাপন করেন নারী ইন্টার্ণরা। তাকে প্রহার বা তদন্ত কমিটি গঠনের আগে কেন এসব অভিযোগ করা হয়নি, এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তারা (ইন্টার্ণরা)। এরপরও তাদের অভিযোগও আমালে নিয়ে অধিকতর তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ডা. মাহফুজের অশালীন আচরণের প্রমাণ মিলে। এরপরই তাকে অন্যত্র বদলি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র লিখা হয়। পাশাপাশি ডা. মাহফুজকে প্রহারকারি ছয় ইন্টার্ণ চিকিৎসককে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি ঘোষণা করা হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার ইন্টার্ণ শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতি শুরু করে।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানোর পরই সন্ধ্যার পর ডা. মাহফুজের বদলি আদেশও আসে। শুক্রবার তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। ইন্টার্ণদের অভিযোগে একজন চিকিৎসককে শাস্তি দেয়া হলেও, তারা শুক্রবারও কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করে অব্যহত রাখে। এ বিষয়ে বৈঠকের পর শুক্রবার বিকেলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ইন্টার্ণরা।













