৬ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামের মেয়ে জুসি’র কণ্ঠে ‘বুদ্ধ কীর্তন’

দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »

আপন সংস্কৃতিকে অন্তরে ধারণ করে বুদ্ধ কীর্তনের প্রতি ব্রত হয়ে অধম্য আগ্রহ নিয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কণ্ঠ শিল্পী জুসি বড়ুয়া।

বোয়ালখালী উপজেলার বৌদ্ধ জনপদ কধুরখীল গ্রামে ১৯৮৪ সালে তার জন্ম। পিতা সঞ্জীব বড়ুয়া ও মাতা দিপু বড়ুয়ার কনিষ্ঠ সন্তান। ছোট বেলা থেকেই সংগীতের প্রতি ছিল তার আগ্রহ। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনাকালীন সময়ে ৯ বছর বয়সে গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন তিনি। গানের প্রথম হাতেখড়ি মিঠু চৌধুরীর কাছে। এরপর প্রায় ৪ বছর ওস্তাদ মিহির লালার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেন। নবম শ্রেনিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চে গান গাওয়া শুরু। তৎকালীন সময়ে শিল্পীদের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে দু’একটি গান গাইতে গাইতে মঞ্চে নিয়মিত গান শুরু করেন। পেতে থাকেন দর্শকদের ভালবাসা।

জুসি বড়ুয়া বলেন, ২০০১ সালে শহরের বড় বড় মিউজিশিয়ানদের সাথে মঞ্চে গাওয়া হয়। সেই থেকে চট্টগ্রাম সহ ফেনী, ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার এভাবে বিভিন্ন জায়গায় গান গাওয়া হয়েছে তার। বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বিজয় মঞ্চে গান গাওয়া এভাবে চলতে থাকে।

অপরদিকে গ্রামের কঠিন চীবর দান বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো, বিশেষ করে অনেক শিল্পীর মাঝে সবসময় দর্শকদের চাহিদা থাকতো প্রথমে ধর্মীয় গান দিয়ে শুরু করতে হবে। তাই তার ধর্মীয় গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হতো। এভাবে অনেক কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় গান গাইতে গাইতে তিনি বৌদ্ধ ধর্মীয় গান শেখার প্রতি মনোনিবেশ করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘অনুষ্ঠানে যখন মাত্র ২/৩ টি ধর্মীয় গান গাইতাম এতেই সবাই খুশি হতেন। তখন অন্য কোন গান আর গাইতে হতো না। এতে করে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যায় এবং গানের পরিধি বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে কোন কোন অনুষ্ঠানে ৫/৬ টি ধর্মীয় গানও গাইতাম।’

এভাবে ধর্মীয় চিন্তা -চেতনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক সময় বিভিন্ন গ্রামের কীর্তনীয়ারা প্রশংসা করে ধর্মীয় গান তথা কীর্তন চর্চার প্রতি উৎসাহিত করেন। অতঃপর চেষ্টা চালালেন বুদ্ধ কীর্তন সংগ্রহ করার জন্য।

এ কাজটি করতে গিয়ে অনেকের সহযোগিতা চেয়েছেন। অনেকে সহযোগিতা করলেও কেউ বা নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে কীর্তন সংগ্রহ ও গাওয়ার প্রতি প্রবল আগ্রহে আজ বহু বুদ্ধ কীর্তন তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।

২০১৮ সালে জুসি বড়ুয়া একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন। জুসি বড়ুয়া বলেন, তখনো তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে তেমন অবগত ছিলেন না। সেই সময় ‘সীবলী ব্রত কথা’ নামে একটি সীবলী স্থবিরের বর্ণনা গাথায় পরিবেশন করেন অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে। যেটির সহযোগিতা এবং উৎসাহ যুগিয়েছিলেন কধুরখীল মারজিন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত দীপানন্দ স্থবির। যার ভিউ এখন ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। ‘সীবলী ব্রত কথা’ পরিবেশন করে জুসি বড়ুয়া নামটি বহুল প্রচার প্রসার হয়েছে। সেই থেকে জুসি বড়ুয়ার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরেছে চারদিকে। এ ছাড়াও আষাঢ়ী পূর্ণিমা গাঁথা, বৈশাখী পূর্ণিমা গাঁথা, পরমার্থিক জীবন চর্চা গাঁথা গুলোর অডিও ভার্সন রিলিজ হয় জুসি বড়ুয়া ইউটিউব চ্যানেল থেকে।

বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে কলকাতা, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে জুসি।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ