কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনায় আষাঢ়ি ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসের মাটিচাপায় গর্ভবতী স্ত্রীসহ স্বামী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ জুন) রাত সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা-খাজামনজিল এলাকায় এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির।
নিহতরা হলেন, হাফেজ মো. আনোয়ার হোসেন (২৩) ও সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মায়মুনা আক্তার (১৮)। আনোয়ার হোসেন বাদশা ঘোনার প্রবাসী নজির আহাম্মদের ছেলে। তিনি ৫ বোনের এক ভাই ও বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। আনোয়ার স্থানীয় ওমর ফারুক জামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্বপালন করতেন।
নিহতের চাচা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেশী সায়মুন আমিন জানান, রাত তিনটার দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। তা চলে ঘন্টা ধরে। এরই মাঝে অকস্মাৎ বাড়ির লাগোয়া পাহাড় ধ্বসে আনোয়ারদের ঘরের চালে পড়ে। এতে চালটি দেবে গিয়ে খাটে ঘুমানো স্বামী-স্ত্রীকে চাপা দেয়। এতে অন্যরুমে থাকা আনোয়ারের মা-বোনেরা উঠে শোর-চিতকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। তার যে যার মতো মাটি সরিয়ে আনোয়ার ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেন। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় ধ্বসের বিষয়টি জানার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ও কক্সবাজার দমকল বাহিনীকে ঘন্টা খানেক কল দেয়া হয়। কিন্তু তারা সাড়া না দেয়ায় স্থানীয়রা যে যার মতো মাটি সরান। চালের টিন সরাতে গিয়ে একজনের হাত ও আরেক জনের পা কেটে গেছে। পরে দমকল বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে এসে মরদেহ ও ঘটনাস্থলের ছবি নিয়ে গেছে।
স্বজনদের মতে, নিহত আনোয়ার হোসেনের সাথে মাইমুনার আটমাস আগে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। রাতে বৃষ্টির সময় একবার ঘুম থেকে উঠে আনোয়ার সবকিছু অবলোকন করে আবার শুতে যায়। ভারী বৃষ্টি দেখে তার (আনোয়ারের) মা বউকে নিয়ে তাদের রুম থেকে বাড়ির অন্যরুমে চলে আসতে বলেছিল ছেলেকে। কিন্তু কিছু হবে না বলে, দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল আনোয়ার ও মাইমুনা। সেভাবেই তাদের উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, দুজনকে মাটিচাপা হতে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে আনা হয়। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তারা মারা যান। মরদেহগুলো মর্গে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, আনোয়ারদের উদ্ধার করা আবদুল্লাহ সিন্ডিকেট এলাকার পাহাড় কাটার কন্টাক্ট নেন। তারা খুবই বিপদজনক ভাবে পাহাড় কেটে ঘর করার ব্যবস্থা করে দেন। আনোয়ারদেরও সেভাবে ঘর করিয়ে দেয়া হয়েছিল। কাটার পর খাড়া হয়ে থাকা পাহাড়টি ভারী বর্ষণে ধ্বসে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পেটের বাচ্চাসহ তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিলো।
উল্লেখ্য, গেল বুধবার (১৯ জুন) কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের স্থানীয় দুজনসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়।