২৬ অক্টোবর ২০২৫

বিজুর ফুল ভাস‌লো সাঙ্গুর জ‌লে

বান্দরবান প্রতিনিধি»

গেল দুই বছর প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আনন্দ করতে পারেনি চাকমা, তংচঙ্গ্যা সহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মালম্বীরা। দীর্ঘ দুইবছর পর নতুন বছরকে বরণ করতে সকালে বান্দরবান সাঙ্গু নদীর তীরে একত্রিত হয় চাকমা ও তংচঙ্গ্যা জনগোষ্ঠিরা। ঐতিহ্য পোশাকে পরিধান করে বিভিন্ন সাজিয়ে গোছিয়ে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেন। নিজেদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য পোশাকের দলবেঁধে কলা পাতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল সাজিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এসময় সকল রোগ মুক্তির ও আপদ বিপদ এবং সকল প্রানীর হিতসুখ মঙ্গলময় কামনা করেন। পাশপাশি পুরানো বছরকে ত্যাগ করে নতুন বছরকে বরণ করে নেন বৌদ্ধসম্প্রদায়ের চাকমা ও তংচঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা। নতুন বছরকে বরণ করতে পেরে আনন্দিত সবাই।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে সাঙ্গু নদীর তীরে বান্দরবান রান্যাফুল সোসিয়াল অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির আয়োজনে চাকমা ও তংচঙ্গ্যা জনগোষ্ঠিরা ফুল ভাসিয়ে বিজু উৎসব উদযাপন করা হয়।

চাকমা সম্প্রদায়ের মতে, চৈত্র মাসের শেষ দিনের আগমণ ঘটে বিজু উৎসব । সে বিজু উৎসবের উদ্দীপনায় আনন্দের মাঝে ঘরে পাজন,জগরা সহ বিভিন্ন রকমারী তরকারী তৈরী করা হয় প্রতিটি ঘরে। চাকমা ভাষায় এটিকে বলা হয় ” বিজু বেরান্নে”। ছোট বড় থেকে শুরু করে নিজেদের ঐতিহ্য পোশাকে সাজসজ্জায় সাজিয়ে পরিবারে প্রধান কর্তাকে প্রনাম করে আশীর্বাদ নিয়ে থাকেন। শুধু তা নয় যুবক যুবতীসহ সপরিবারে সদস্যকে নিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে নিমন্ত্রিত খেতে যান। তবে চাকমাদের খাবারেরব মূল আকর্ষন হলো পাজন তরকারী। শত প্রকার সবজি, মাছ, শুটকি দিয়ে তৈরী করা হয় পাজন তরকারী। প্রতিটি বাড়ীতে পাজন নামে খাবার রান্না করে বাড়িতে আগমনে অতিথির মাঝে পরিবেশন করা হয়।

কথা হয় সাঙ্গু নদীতে ভুল ভাসতে আসা অপর্ণা চাকমা সাথে। তিনি জানিয়েছেন, দুই বছর মহামারী করোনা কারণে আনন্দের মেতে উঠতে পারেনি। আজ সকালে ফুল ভাসিয়ে সমস্ত পুরানো দিনগুলোকে মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি।

চাকমা তরুণী প্রান্তিকা তংচঙ্গ্যা বলেন, ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন ফুল সংগ্রহ করেছি। ঐতিহ্য পোশাক পড়ে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে বিজু উৎসব পালন করেছি। এদিনটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন।

বান্দরবান রান্যাফুল সোসিয়াল অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির উদযাপন কমিটি সভাপতি মনি শংকর চাকমা জানান, মহামারি করোনার কারণে বিগত দুই বছর বাড়ির গন্ডি ভিতরে বিজু পালন করতে হয়েছে। এবারে করোনা প্রদুর্ভাব কমে যাওয়া পাহাড়ের পাড়া-পল্লীতে বইছে উৎসবের আমেজ। তবে মুসল্লী ধর্মালম্বীদের রোজা মাথা রেখে ঐহিত্য খেলাধুলা আয়োজন করা হয়নি। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা, অতিথি আপায়ন, পাচন রান্নাসহ পালন করবেন যথারীতি।

আরও পড়ুন