অনিন্দ্য টিটো»
একশ’ তেরো বছরে এসে থমকে গেল শতবছরের পুরনো সার্বজনীন উৎসব চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা! এবার নাকি কেবল ‘মাঠ সংকট’-এর কারণেই জব্বারের বলীখেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না! ফলে বসছে না বলীখেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠা বৈশাখী মেলাও। কিন্তু সত্যিই কি চট্টগ্রামে মাঠ সংকট? ভাবছি!
জব্বারের বলীখেলা নিছক কোন বলীখেলা নয়। এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। ১৯০৯ সালে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই বলীখেলা চালু করেছিলেন চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধন্যঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর।
ব্রিটিশ সরকার ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের জন্য আবদুল জব্বার মিয়াকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। কিন্তু আবদুল জব্বার তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জব্বারের বলীখেলা। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বরাবরের মতোই বসেছে বৈশাখী মেলা।
২০২০-২১ দুই বছর মহামারী করোনায় বলীখেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই দুই বছরকে ধর্তব্যে নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এবার পরিস্থিতি তো ভিন্ন। তারপরও কেন সম্ভব হচ্ছে না? ‘মাঠ সংকট’-এর যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে তা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত! নাকি আমরা পিছু হাঁটছি হাজার বছরের সংস্কৃতি থেকে! বাঙালিয়ানা ঐতিহ্য থেকে ! তবে কি এভাবে ঠুনকো নানান অজুহাতে একে একে বন্ধ হয়ে যাবে ইতিহাস বয়ে আনা ঐতিহাসিক সমস্ত আয়োজন!
লেখক : ব্যাুরো প্রধান, গাজী টেলিভিশন (জিটিভি), চট্টগ্রাম ও
সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)