মুজতবা সউদ, ঢাকা »
‘দুনিয়ার ইলিশ, এক হও’। না, এমন কোন শ্লোগান দিয়ে মিছিল করেনি ইলিশ জাতি। করেনি কোন প্রতিবাদী ইলিশ সভা, ইলিশ বন্ধন, সেমিনার। নদীতে কর্মসূচি ডেকে বন্ধ করেনি নৌ চলাচল। ১৯৮১ সালে আমার শিক্ষক তুল্য, প্রিয় মানুষ (সাংবাদিক, লেখক, গীতিকার, পরিচালক) শহীদুল হক খান শুরু করেছিলেন এই ইলিশ নিধন যজ্ঞ। (ক্ষমা করবেন শহীদ ভাই)। পান্তাভাত খাওয়া, এই বাংলায় হাজার হাজার বছর আগে থেকেই নৈমিত্তিক। এ জন্য কোন বিশেষ দিন ছিলো না।
সম্রাট আকবর এই বাংলা অব্দ চালু করার অনেক বছর পর শুরু হয় চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা রকম মেলা আর অনুষ্ঠান আয়োজন। যার যার সাধ্যমতো খাবার। বাতাসা থেকে নানা রকম মিষ্টান্ন। তবে পান্তার সঙ্গে ইলিশ নয়। নানা রকম উদ্ভাবনীতে পারঙ্গম আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসার মানুষ শহীদুল হক খান, ১৯৮১ সালে রমনা বটমূলে আয়োজন করলেন এই পান্তা ইলিশ খাবারের।
ছায়ানটের অনুষ্ঠান যখন চলছিলো, তখন দেদারসে বিক্রি হলো পান্তা ইলিশ। অনুষ্ঠান ফুরোবার আগেই পান্তা ইলিশ শেষ। পরের বছর আরও একদল যোগ হলো। ১৯৮৩ সালে পান্তা ইলিশের সঙ্গে শুটকি ভর্তা নিয়ে বড়ো রকমের আয়োজন নিয়ে হাজির আরেকটি গ্রুপ। দুই তিন বছরের মধ্যেই দাবানলের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চর্চা।
১৯৯০ দশকের গোড়া থেকেই এটা হয়ে গেলো বৈশাখের সংস্কৃতি। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে কোন শ্রেণির মানুষের কাছে পহেলা বৈশাখ মানেই পান্তা-ইলিশ। হোক তা জাটকা (ইলিশের বাচ্চা)। ব্যাপক হারে ইলিশ নিধন শুরু হয় বৈশাখ শুরুর আগেই। এমন কি ফাল্গুনের শুরু থেকেই। বরফ দিয়ে বা হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় চড়া দামে বিক্রির জন্য। অথচ, এটা বাংলা বা বাঙালির সংস্কৃতি ছিলো না।
আমার প্রিয় মানুষ শহীদুল হক খান ভাইকেই আমি দায়ী করবো এই ইলিশ নিধন যজ্ঞের জন্য। ইলিশেরা এর প্রতিবাদে কোন কর্মসূচি না নিলেও প্রকৃতি তাদের রক্ষা এবং বংশ বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। ১৪২৬ থেকে তারা অনেক নিরাপদ। থাকবে ১৪৩১ পর্যন্ত। কারণ এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। রমজান মসে সাহরিতে তারা কাঁটা সমৃদ্ধ ইলিশ খাবে না। কিছু সংখ্যক ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। এই লটে ছয় বছর আপনারা থাকবেন নিশ্চিন্ত। আমরা না থাকলেও প্রায় ৩৫ বছর পর আবার পহেলা বৈশাখ শুরু হবে রমজান। অন্যকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলেও তখন ৪ বছর থাকবেন নিশ্চিন্ত।
এই লটে ৬ বছর নিশ্চিন্তে থাকার কারণঃ (১)পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ (করোনা আতংক কেবল শুরু, জনসমাগম বন্ধ)। (২) পহেলা বৈশাখ ১৪২৭, করোনা আতংক, ভয়াবহ আকার ধারন। (৩) পহেলা বৈশাখ ১৪২৮, ১ রমজান সঙ্গে করোনা আতংক। (৪) পহেলা বৈশাখ ১৪২৯, ১১ রমজান। (৫) পহেলা বৈশাখ ১৪৩০, ২০/২১ রমজান। (৬) পহেলা বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ রমজান বা ঈদ উল ফিতর। প্রিয় ইলিশ ভাইয়েরা, আমার জানা মতে, আপনাদের বংশবৃদ্ধি ক্ষমতা প্রচুর। আপনারা নিশ্চিন্তে বিচরণ করুন। বংশবৃদ্ধি করুন। ধরা যে পড়বেন না এমন নয়, তবে বাংলাদেশের মানুষ এই ছয় বছর আপনাদের ব্যাপক ভাবে নিধন করবেনা। বাংলাদেশের নদীগুলো আপনারা কানায় কানায় ভরিয়ে তুলুন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট