বান্দরবান প্রতিনিধি »
বান্দরবানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নে পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের কাইচতলী ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে।
গত ১৯ এপ্রিল বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভোটার জালিয়াতের অভিযোগ এনে চারজনের বিরুদ্ধের ফৌজদারি মামলা করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান।
অভিযুক্তরা হলো— রোহিঙ্গা শরণার্থী শফিউল মোস্তফা (২০), আলী জোহার (২২), সদর উপজেলার ৪নং সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মার্মা ও ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন।
অভিযোগকারী মো. হাসান বলেন, ‘এর আগে অনেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়েছেন ইউপি সদস্য। প্রমাণ না থাকায় কিছুই করতে পারিনি। ভুয়া কাগজপত্র জালিয়াতি করে এবারও আরো দুজন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক করার জন্য প্রচেষ্টার চালাচ্ছেন ইউপি সদস্য।’
এ সম্পর্কে ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘অভিযোগটি মিথ্যা। আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’ ব্যাপারটি নিয়ে কাল বান্দরবানে এসে দেখা করবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ৪নং সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা জানান, ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন বিশ্বস্ত বিধায় তিনি কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেনি। তাই তিনি না দেখে স্বাক্ষর ও সীল দিয়েছিলেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কৌশিক দত্ত। তিনি জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার নিবন্ধনের বিষয়ে বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এ.সি.আর মামলা নং ৫৬/২০২২ এর সূত্রে ফৌজদারি অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনের বিরুদ্ধের মামলা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ জনের বিরুদ্ধের মামলা হয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযোগের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ উল্লেখ করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ৪নং সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে স্বাক্ষর ও সিল নিয়ে যোগসাজশে দুই রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কাগজপত্র দাখিল করেন বান্দরবান সদর উপজেলায়। সেই নাগরিকত্ব সদর উপজেলার নির্বাচনের কার্যক্রম শেষে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের যাচাই বাছাইয়ের পর প্রদত্ত তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের এখন প্রক্রিয়াধীন।
দেখা গেছে, জন্ম ও মৃত্যু সনদ জালিয়াতি করে দুই রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয়ধারী দিয়েছেন সুয়ালক ইউনিয়নে ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন। দুই রোহিঙ্গা বিরুদ্ধে সত্যতা গোপন করে জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া ঠিকানায় জাল জন্ম ও মৃত্যু সনদের সত্যায়নের সত্যতা প্রকাশ পায়। তবে মৃত ব্যাক্তি খলিল রহমান বর্তমানে তিনি এখনো জীবিত এবং সে সুয়ালক ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ও বাংলাদেশের ‘নাগরিক’।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় বহিরাগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাইরে থেকে এনে জালিয়াতি করে ভোটার বানিয়ে দিচ্ছেন ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দীন। বিভিন্ন মহল থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে স্বাক্ষর হতে সীল পর্যন্ত জালিয়াতি করে উপজেলার বরাবর সে কাগজপত্র দাখিল করেন। পরে ভুয়া মৃত্যু, জন্ম সদন তৈরি করে দেশের নাগরিকত্ব দিচ্ছে ইউপি সদস্য।
২নং ওয়ার্ডের এলাকার বাসিন্দা মাতব্বর মুনসুফ আলী জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জালিয়াতি করে প্রায় কয়েকশ জনকে ভোটার বানিয়েছেন ইউপি সদস্য। এর প্রতিরোধ করতে গেলে উল্টো ভয়ভীতি দেখান তিনি।
একই এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, ইউপি সদস্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর না দিয়ে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদেরকে ঘর দিয়েছেন। এর বিচার দ্রুত চান তিনি।
বান্দরবান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরান্টু চাকমা জানান, জালিয়াতির অভিযোগ প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গার কাগজপত্র স্থগিত রাখা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা আফরিন মুস্তাফা জানান, জালিয়াতি ব্যাপারে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে এবং সেই ব্যাপারে তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর সেটি বিস্তারিত জানা যাবে।













