বান্দরবান প্রতিনিধি »
‘গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্টির ৪০০ একর জুম ভুমি ও বিভিন্ন ফলদ বাগান লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি রাবার কোম্পানি তাদেরকে পাড়া থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে।’— অভিযোগ পাড়াবাসীর।
বান্দরবানের লামা সরই ইউনিয়নে তিন পাহাড়ি পাড়ার জুমচাষে বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। বৃহস্পতিবার ( ১৯ মে) সকালে বান্দরবান পৌরসভা সংলগ্ন কাপ অফ জয় রেস্টুরেন্টে অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তদন্ত দলের সদস্য ইয়াংঙান ম্রো। তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাড়াবাসীর অভিযোগ গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্টির ৪০০ একর জুম ভুমি ও বিভিন্ন ফলদ বাগান লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি রাবার কোম্পানী তাদেরকে পাড়া থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে।
সেই আগুনে ১ লাখ ২৮হাজার বিভিন্ন ফলদ ও বনজ চারা, ৭ একর ধানের জমি, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশের বাগান যেখান থেকে পাড়াবাসী অভাবের দিনে বাঁশ সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন— তা আগুনে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও পাড়াবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে গত ১৭ মে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৫০-২০০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ৪০০ একর জায়গার বন কাটা হয় তারপর গত ২৬ এপ্রিল জুম ভূমিতে আগুন দেওয়া হয়। সে আগুনে জুম চাষের জমি ও প্রাকৃতিক বন, ফলদ বাগান, বাঁশ -বাগান পুড়ে যাওয়ায় বন নির্ভর পাড়াবাসীর আয়ের উৎস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনটি পাড়ার ৩৯ টি পরিবার তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৭ মে থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাড়ানোর কারনে সাময়িক খাদ্যের অভাব কেটে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে লাকংম পাড়া গ্রামপ্রধান (কার্বারী) লাংকম ম্রো বলেন, রাবার কোম্পানির লোকজনের ভয়ে তিন পাড়ার ৩৫জন ছাত্র/ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছেনা বলে অভিযোগ করেন।
ঘটনায় তদন্ত দলের পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,গত ১৯৯৩-৯৪ সালে লামা সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি ও সরই মৌজায় মোট ৬৪ জনকে ব্যক্তিকে ২৫ একর করে ১ হাজার ৬শত একর রাবার চাষ করার জন্য ৪০ বছরের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন ইজারা প্রদান করেন। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী ২৮ টি শর্ত ইজারাদারদের দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে ইজারা চুক্তির ১০বছরের মধ্যে রাবার বাগান সৃজন না করলে আপনা-আপনি ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়া জমি হস্তান্তর যোগ্য নয়, এখন ২৯বছরে এসে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে ৪শ একর তিন পাড়াবাসীর জুমভূমি বেদখল তদন্ত দলের কাছে অপরাধ বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন পাড়াবাসীর জুম ভুমি বেদখল করার ব্যাপারে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ম্যানেজার কামাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলি, নারী প্রগতি সংঘ’র প্রতিনিধি সঞ্জয় মজুমদার, তদন্ত দলের সদস্য দীনেন্দ্র ত্রিপুরা, ইয়াং ঙান ম্রো, তিন পাড়া কার্বারী লাংকম ম্রো, জয় চন্দ্র ত্রিপুরা,রেং য়েন ম্রোসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।













