১২ নভেম্বর ২০২৫

রক্তের জন্য আহাজারি— চমেক হাসপাতালে আহত বাড়ছে

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

গভীর রাতে স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে চমেক হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। কেউ ফোন ধরে স্বজনদের খবরাখবর দিচ্ছেন আর গুমরে গুমরে কাঁদছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শত শত স্বজনের আর্তচিৎকারে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

চমেক হাসপাতালের গেট দিয়ে আহতদের বহন করা একটি করে গাড়ি ঢুকছে আর ভিড় সামলাতে প্রাণপণে বাঁশি ফুঁকে চলেছেন আনসার সদস্যরা। রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা রক্তের জন্য হ্যান্ডমাইকে একের পর এক ঘোষণা দিয়েই যাচ্ছেন। যাদের রক্তের প্রয়োজন এবং যারা রক্ত দিতে চান তাদের যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছেন। সবাইকে ব্লাড ব্যাংকের দিকে যেতে বলছেন। ভিড়, বাঁশির শব্দ, আহতদের কান্না আর আর্ত চিৎকারে সেই ঘোষণাও হারিয়ে যাচ্ছে।

এই গভীর রাতেও ছুটে আসছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যে যার মতো করে সাহায্য-সহযোগিতা করেই যাচ্ছে। আগুনে দগ্ধ ও আহতের সংখ্যা বাড়েছে, লম্ব হচ্ছে সারি।

চমেক মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, আহতদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আগতদের কারও কারও নাম এন্ট্রি করা হয়নি। আঘাত অনুসারে তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আহতদের আনা হচ্ছিল রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত।

চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজন। হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটের সামনে দাঁড়ালেই কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করতে শুনা যায়—রক্ত দরকার, রক্ত। দেখা গেছে, একজন কাগজে লিখে মাথার উপর উঁচিয়ে ধরে রক্ত খুঁজছেন। ওই কাগজে লেখা ‘নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন’।

মধ্যরাতে আহতদের দেখতে হাসপাতাল ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএম ডিপোতে আগুন থেকে কন্টেইনারে বিস্ফোরণে আহতরা সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসেছেন। এখনও আসছেন। সব চিকিৎসক ও নার্সদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়ো করেছেন। রক্ত দেওয়ার জন্য লোকজন জড়ো করা হয়েছে।’

এসময় চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমার এ বক্তব্য যারা শুনছেন চমেক ও অন্য যত ডাক্তার চট্টগ্রামে থাকেন তারা সবাই নিজ নিজ এপ্রোনটা পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চলে আসুন।’

পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশিক গণমাধ্যমকে চার জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চারজনের মধ্যে সবাই চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এক পুলিশ সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকট শব্দের একটি বিস্ফোরণের একটি শব্দ তারা পেয়েছেন। এরপর আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে কনটেইনারে বিস্ফোরকজাতীয় দ্রব্যের কারণে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিটে সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আগুন নেভাতে আরও কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকেও ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট আনা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।’ তবে কতজন হতাহত হয়েছেন সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। বিস্ফোরণে অনেক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত আছে কিনা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও সময় লাগবে।’

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ