মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া কূটনীতিকদের একজন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদ আর নেই। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার বাসা শিউলিতলায় তার মৃত্যু হয় বলে তার স্ত্রী বিলকিসি মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান।
৮০ বছর বয়সী এই অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তিন সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর চারদিন আগে মহিউদ্দিন আহমদকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানান তার ভাই জিয়াউদ্দিন আহমদ।
বিলকিসি মহিউদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনি আর নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে লন্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত ছিলেন মহিউদ্দিন। ১ অগাস্ট ট্রাফলগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন।
ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের কাজে যোগ দেন। সেই উত্তাল সময়ে ২৩ অগাস্ট তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।
কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে মহিউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, স্বাধীন দেশের স্বপ্নে সেদিন তাদের যুদ্ধটা ছিল ‘কূটনৈতিক ফ্রন্টে’। আর তাতে সফলও হয়েছিলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন হয়েই দেশে ফিরেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি তাকে স্বাগত জানাতে মহিউদ্দিন আহমদও হিথ্রোতে উপস্থিত ছিলেন।
পরে তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি, জাতির পিতা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘ভয় নেই, আমি এসে গেছি।’
পেশাদার কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদের চাকরিজীবন কেটেছে নানা উত্থান পতনে। এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল অন্য মন্ত্রণালয়ে। বিএনপি এসে করেছিল চাকরিচ্যুত।
পরে শেখ হাসিনা সরকারে এসে মহিউদ্দিন আহমদকে চাকরিতে ফেরান, সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেন।
২০০১ সালের জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দারিদ্র্য, উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখেছেন বাংলা এবং ইংরেজিতে।













