বাংলাধারা ডেস্ক »
জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হচ্ছে। আজ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে এ বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। ওই দিন থেকে কার্যকর হবে এ বাজেট।
এদিকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থ বিল-২০২২ পাস হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। এর বাইরে সংসদ সদস্যদের আনা যে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে সেগুলো মূলত বিলের ভাষাগত পরিবর্তন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল সংসদ অধিবেশনে অর্থ বিল-২০২২ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে অর্থ বিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সংসদ সদস্যরা অর্থ বিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। বাকিগুলো সদস্যদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে ৭ শতাংশ কর দিয়ে শুধু পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনা যাবে। যারা সরকারের দেয়া এ সুযোগ নেবেন না, তাদের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ হবে নির্ধারিত করের সমপরিমাণ। পাস হওয়া বিলে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। আর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে, তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে।
অর্থ বিল পাসের আগে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাজেটের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তার আগে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন।
এবারের বাজেট প্রস্তাবের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৯ জুন সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। বাজেট উপস্থাপনের পর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রায় ১৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয় ১৩ জুন। এর মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছে, তার অনুমোদন দেয়া হয়।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বেড়েছে। আর ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ২২ হাজার ৬১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা কমেছে। তাতে সার্বিকভাবে ১০ হাজার ১৮১ কোটি টাকা কমে সংশোধিত বাজেটের নিট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেটে সরকারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসেবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সরকারের মোট আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর- বহির্ভূত কর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আগামী অর্থবছরে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা বিদেশী অনুদান পাওয়া যাবে বলে বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের তারতম্যের কারণে নতুন বাজেটে ঘাটতি বাড়লেও তা জিডিপির ৫ শতাংশের ঘরেই রয়েছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসেবে বাজেটে ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব করা হয়। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ও ঘাটতির অনুপাত কমানোর লক্ষ্য থাকলেও টাকার অংকে এর পরিমাণ বাড়ছে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক খাতের ঋণ ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে যা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে থেকে একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান বাবদ (নিট) গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭৭ হাজার ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে।













