পদ্মা সেতুর পর সবার নজর এখন বঙ্গবন্ধু টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) দিকে। এটি এখন আর স্বপ্ন নয় অনেকটাই বাস্তব। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এ টানেল এখন দৃশমান।
ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলের টানেলটির ৮৬ ভাগ কাজ শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে এর পুরো কাজ। এরপর-ই প্রথমবারের মতো টানেল যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
বন্দর নগরীর পতেঙ্গায় চলছে টানেল নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। ধিরে ধিরে দৃশমান হচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেল। নদীর তলদেশে দুটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে গাড়ি চলাচলের যে পথ তার কাজও শেষের দিকে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একটি সুড়ঙ্গ থেকে আরেকটিতে যাওয়ার পথ তৈরি করা যা অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। সমান তালে চলছে অগ্নি নিরাপত্তামূলক ফাইয়ার প্লেট এবং ডেকোরেশন প্লেট বসানো।
প্রকল্প সংশিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের কাজ ৮৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দিন-রাত সমান তালে চলছে নির্মাণ কাজ। বাকি ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হলেই টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। টানেল দিয়ে একদিনে পার হতে পারবে ১৭ হাজার যানবাহন।
৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এই টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
টানেলটি খুলে দেওয়া হলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা, বাঁশাখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আনোয়ারা থেকে সড়কপথে বিমানবন্দর যেতে আগে যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো, টানেল দিয়ে লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।
পতেঙ্গায় ঘুরতে আশা এক পর্যটক বলেন, টানেলর কাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে চট্টগ্রাম মহানগরের যোগাযোগ অনেক গতিশীল হবে।
এছাড়া আনোয়ারার স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, এত বছর ধরে নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে বিমান বন্দর গিয়েছি, টানেল র্নিমাণ হয়ে গেলে খুব দ্রুত বিমান বন্দর পৌঁছে যেতে পারবো।
বন্দরনগরীর পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই পাতাল পথ কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে উঠবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যাওয়া-আসা করবে যানবাহন। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন থাকবে।
নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এটি কোনো সেতু বা রাস্তা নয়। আমরা নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কাজ শেষ হওয়ার পর যানবাহন চালানোসহ অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে তারপর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত আরও ৬ মাস সময় দীর্ঘায়িত হলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় হবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। যদিও ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।













