সুরাইয়া রহমান তন্নী »
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে তার স্থপতি কেবল পুরুষই নয়, নারীও বটে। কবি নজরুলের ভাষায় বললে, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
বিগত বছরগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র পোশাক শিল্পে নয়, এখন অন্যান্য সব শিল্পেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ দেশের নারীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে পূর্বদিকে খাজা রোড হয়ে কিছু পথ এগুলেই বলিরহাট। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত বলিরহাট ফার্নিচারের বাজার হিসেবে দেশব্যাপী প্রসিদ্ধ। বর্তমানে এখানে ৪ হাজারেরও বেশি ফার্নিচারের দোকান ও শোরুম রয়েছে। আর এ কাঠশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। নকশাযুক্ত কাঠের ফার্নিচারের জন্য প্রসিদ্ধ এ বলিরহাটে প্রতি বছর শত কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এখানে নজরকাড়া আকর্ষণীয় ডিজাইনে ফার্নিচারের ওপর নিত্যনতুন নকশার কারুকাজ করে যাচ্ছেন শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিক।
সরেজমিনে বলিরহাট পরিদর্শন করে দেখা যায়, বর্তমানে এখানে প্রায় শতাধিক নারী শ্রমিক রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ফার্নিচার তৈরির বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেখানে তারা ফার্নিচারের হরেকরকম নান্দনিক নকশা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই করে যাচ্ছে। এখানকার নারী শ্রমিক, কারিগররা খাট, আলমিরা, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, শোকেস থেকে শুরু করে সব ধরনের ফার্নিচার রাঙ্গিয়ে তোলেন বিভিন্ন ফুলের নকশায়, যা কাঠের তৈরি ফার্নিচারের সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণ।
কারিগর রাবেয়া আক্তার বাংলাধারা নিউজকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ভোলা। আমার স্বামী ভ্যান চালায়। তার একার আয়ে কোনোভাবে সংসার চলে না। তাই আমি এ কাজে যোগ দিয়েছি। এখানে আমি নকশার কাজ করে থাকি। আর আমার পারিশ্রমিক দিন ৪০০ টাকা। অবশ্য কাজটাকে উপভোগও করি।’
আরেক নারী শ্রমিক সুরমা আক্তার বাংলাধারাকে বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। সন্তানরা এখনও ছোট। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে একাজে যোগ দিয়েছি। এখানে আমি ফার্নিচারে পলিশ করে থাকি। আমি দিনে ৩৫০ টাকা বেতন পাই। ওভারটাইম করলে আরও বেশি পাই।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অন্যান্য কাজের চেয়ে এই কাজটি তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই করেন।
বলরিহাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানকার প্রায় সব কারখানাতেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন।
কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ভালো কাজ করে থাকে। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম পারিশ্রমিকে নারীরা কাজ করে থাকেন।
ফার্নিচার ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন বাংলাধারা নিউজকে বলেন, ‘আমার কারখানায় ৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করে। এর মধ্যে ৩ জন পলিশ ও ২ জন নকশার কাজ করে। তারা সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে।’
বলিরহাট ফার্নিচার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হাজী মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে এখানকার নকশাযুক্ত ফার্নিচার দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে আসছে। এখানকার কাঠের দক্ষ কারিগর ও শ্রমিকরা মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকেও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’













