৪ নভেম্বর ২০২৫

ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ঘাড়ে দ্বিগুণ ভাড়ার ‘জুলুম’

রবিউল হোসেন রবি »

গার্মেন্টসকর্মী মানিক হাওলাদার ঈদের ছুটি পেয়ে সপরিবারে গ্রামের বাড়ি বরিশালে যাবেন। ছুটি পেয়েই তিনি চলে যান ইপিজেডের হাসপাতাল গেট বাস কাউন্টারে। কিন্তু কাউন্টারে গিয়ে ভাড়া শুনে তার চক্ষু চড়কগাছ। ৯০০ টাকার ভাড়া ঈদ উপলক্ষে তার কাছে চাওয়া হচ্ছে ১৮০০  টাকা। এ নিয়ে কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধে জড়ান তিনি। একপর্যায়ে উপায়ন্তর না পেয়ে দ্বিগুণ ভাড়াতেই ৩টি টিকেট কাটেন তিনি।

মানিক হাওলাদার বলেন, ‘আজ ঈদ উপলক্ষে ছুটি পেয়েছি। গত দুই বছর করোনার কারণে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এবার কোরবানি ঈদে তাই সপরিবারে বাড়ি যাওয়ার কথা ভেবেছি। সেই অনুযায়ী বেপারী গাড়ির কাউন্টারে এসেছিলাম ভান্ডারিয়ার টিকেট কাটতে। কিন্তু ভাড়া শুনেই বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে মিটে গেল। কি আর করার? বাড়ি যেহেতু যেতেই হবে তাই ৩টি টিকেট দ্বিগুণ ভাড়াতেই কাটলাম।’

এদিকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রাইসা ঈদের ছুটিতে বাবা-মায়ের সাথে রংপুরের গাইবান্ধা যাবেন। সপরিবারে তারা এসেছেন কাউন্টারে৷ কিন্তু কাউন্টারে এসে হতাশ তারা। অন্যান্য সময় গাইবান্ধার ভাড়া ৭শ’ থেকে ৮০০ টাকা নিলেও এখন নিচ্ছে ১৬০০ টাকা। বাবা দিনমজুর হওয়ায় সাধ্যে কুলাচ্ছেনা টিকেটের দাম। তাই মন খারাপ করেই ত্যাগ করলেন কাউন্টার।

রাইসার বাবা কালাম শেখ বলেন, ‘আমি বাবা দিনমজুর। দিনে এনে দিনে খাই। বাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম বউ-মেয়ে নিয়ে। কিন্তু যে ভাড়া চাচ্ছে, তাতে এবার বোধয় যাওয়া আর হবে না। কি করব আর? বাসায় চলে যাচ্ছি।’

সোহেল নামে এইচ কে ডি গার্মেন্টসে কর্মরত এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। এমনিতে বাসভাড়া ৪৫০ টাকা করে দিই। কিন্তু আজ ৬০০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটেছি। দেড়শ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে আমাকে ঈদের কারণে। এটা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। তবে আমরাও অসহায়। কিন্তু তাও শান্তি লাগছে এই ভেবে— পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব।’

শাহাদাত হোসেন নামে এক ছাত্র বলেন, ‘আমরা একটি রিজার্ভ বাসে ঠিক করেছি গাইবান্ধা যাওয়ার জন্যে। আমি এবং আমার বাবা মিলে বাড়িতে যাচ্ছি। ৪২ সিটের এই বাসের ভাড়া ১৬০০ টাকা করে পড়েছে জনপ্রতি। অনেকের কাছ থেকে ১৭০০ করে নিয়েছে শুনেছি, সিউর জানি না। এমনিতে ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা। ঈদের কারণে এই বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে।’

এসময় দেখা যায়, হাসপাতাল গেট হয়ে বন্দরটিলা যেতে রাস্তার এক পাশে ২০-২৫টি বাস কাউন্টার রয়েছে, যেগুলোর একটিতেও নেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা। ভাড়া নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই যাত্রীদের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়াচ্ছেন টিকেট বিক্রেতারা।  তবে তাদের দাবি— তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে এই বাড়তি ভাড়া।

বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন কেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতাল গেটের একটি কাউন্টারের ম্যানেজার বলেন, ‘ঈদে তো সবাই বোনাস পায়। আমাদের কি বোনাস আছে? এটাই মনে করেন বোনাস।’

দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের এমন চিত্র শুধু ইপিজেড এলাকায় নয়— নগরীর বড়পোল, অলংকার ও এ কে খান এলাকায় অবস্থিত বাস কাউন্টারগুলোতেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, পোস্তগোলা, পদ্মা সেতু, মাদারীপুর হয়ে খুলনার দূরত্ব ৪৬৯ কিলোমিটার, ভাড়া এক হাজার ১৪৯ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, পোস্তগোলা, পদ্মা সেতু, ভাঙ্গা, বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে বরগুনার দূরত্ব ৪৯৫ কিলোমিটার, ভাড়া ধরা হয়েছে এক হাজার ২২৩ টাকা।

কিন্তু নগরের বাস কাউন্টারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বরিশালগামী প্রত্যেকটি বাসের টিকেট বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৬০০-৭০০ টাকা বাড়তিতে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকেট কাটছেন যাত্রীরা।

তবে নগরীর দামপাড়া বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ঢাকা এবং কক্সবাজারগামী যাত্রীদের কাছ থেকে ন্যায্য ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। সেখানকার কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত ভাড়ার তালিকাও ঝোলানো রয়েছে কাউন্টারগুলোর সামনে।

ঢাকাগামী এক যাত্রী জানান, তিনি ৫৮০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন। জরুরি কাজে ঢাকা যাবেন। ঈদের সময়েও ন্যায্য ভাড়ায় টিকেট পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি।

কক্সবাজারগামী যাত্রী সোনিয়া বলেন, ‘ঈদে বাড়িতে যাচ্ছি। তবে খুব খুশি আমি। কারণ ন্যায্য ভাড়ায় টিকেট পেয়েছি। যদিও সিট পেতে একটু কষ্ট হয়েছে। তবে পেয়ে এখন খুশি লাগছে বেশ।’

এ বিষয়ে  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বাংলাধারাকে বলেন, ‘কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তারা টিকেটের ফটোকপিসহ ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে অভিযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ