৪ নভেম্বর ২০২৫

ঈদ আনন্দ ভ্রমণে ফয়’স লেক

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

ঈদ মানে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠা, ঈদ মানেই দুঃখ ভুলে যাওয়ার দিন আর ঈদ মানে যেন আনন্দ উপভোগে মনের আনন্দে হারিয়ে যেতে নেই মানা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসছে খুশির ঈদ। উপভোগ করতে থাকে নতুন পোশাক, মজার মজার খাবার আর সুন্দর পরিবেশে বেড়ানোর পরিকল্পিত নানা আয়োজন।

খুশির এই ঈদে নগরের বুকে জেগে ওঠা সবুজের মাঝে আনন্দ ভাগ করে নিতে নগরবাসীকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ফয়’স লেক কমপ্লেক্স। যেখানে সব বয়সী মানুষের আনন্দ বিনোদনের জন্য রযেছে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড, ফয’স লেক রির্সোট ও বাংলো।  ফয়’স লেক কমপ্লেক্স-এ ভ্রমণে নগরবাসী পায় বাড়তি অনন্দ। কেননা এখানে রয়েছে বিনোদনের সকল উপকরণ আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ভিড় করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী দশ দিন উপচেপড়া ভিড় থাকে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো । চট্টগ্রাম শহরে বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও বেড়ানোর জন্য নগরবাসীর প্রধান আর্কষণ থাকে ফয়’স লেক।

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম শহরের বুক চিরে গড়ে ওঠা সবুজে ৩৩৬ একর জাযগা জুড়ে অবস্থিত নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক । প্রায় পাঁচ কিলামিটার জুড়ে আঁকাবাঁকা ফয়’স লেক। প্রবেশের পথে দেখা যাবে বিশাল এক তোরণ। আর এই তোরণ পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই দেখা মিলবে ফয়’স লেকের।

আর্কষণীয় এই বিনোদন কেন্দ্র দুই ভাগে বিভক্ত। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সী ওয়ার্ল্ড। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সাজানো হয়েছে অনেকগুলো রাইড নিয়ে। উল্লেখযোগ্য রাইডগুলোর মধ্যে রয়েছে- সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইস্লাইড, ইয়োলো ড্রাই-স্লাইড, বাগ বাউন্স ইত্যাদি। লেক ভ্রমণের জন্য আছে বোট, স্পিড বোট, ইঞ্জিন বোট, ওয়াটার-বি। খাবার-দাবারের জন্য অনকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি নানা রকম খাবার। অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড রেস্টুরেন্টের ঠিক পাশেই দেখা মিলবে হরেক রকম মাছের খেলা। লেকের উপর ভেসে থাকা ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট। পাহাড়ের ঠিক উপরেই আছে ফটো কর্নার। যেখানে দেখা মিলবে নানা ভঙ্গিতে হরেক প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের গা-ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে সমুদ্রিক প্রাণীদের ভাস্কর্য। গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট অ্যাকুয়াটিক জোন। ফয়’স লেকের দু-পাশে শুধুু যেন সবুজের সমারহ। জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকের দুপাশ জুড়ে রয়েছে সারি সারি গাছ। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ে রয়েছে অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি.,বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগণদ্বীপ, উদয়ণ প্রভৃতি। এসব পাহাড়ে নানা প্রজাতির গাছগাছালির মধ্যে রয়েছে সেগুন, গর্জন, কড়াই, একাশিয়া, আগর, সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, ডুমুর, পাম, থাইকড়াই সহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে বসাক, নিম, অর্জুন, বিশল্যকরণী, পাথরকুচি, দারুচিনি, স্বর্ণগন্ধা, মতমূলি সহ নানাপ্রজাতির গাছ। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রঙ্গন, জুঁই, চম্পা, করবী, বকুল, নয়নতারা, চেরি ইত্যাদি। এই সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে সব বয়সী মানুষদের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইন্টমেন্ট কো. লি. গড়ে তুলেছে বিনোদন কেন্দ্র।

সী ওর্য়াল্ড

ফয়’স লেকের বোট স্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরুলেই দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড। ফয়’স লেকের একপ্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে জলের রাজ্যে এক রোমাঞ্চকর এই পার্ক। দিনভর সকলকে নিয়ে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠার জন্য রোমাঞ্চকর সব রাইডে গড়ে তোলা হয়েছে এ জায়গাটি। এখানকার সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত যা ওয়েভ পুল নামে পরিচিত। সাগরের ঢেউয়ের মতোই ঢেউ খেলা করে এখানে। টিউবে চড়ে ঢেউয়ের তালে ভেসে বেড়ানো যায় ইচ্ছে মতো, ডুবে যাওয়ার ভয় থাকেন না এখানে। ওয়েভ-পুলের ঠিক পাশেই রয়েছে ড্যান্সিং জোন। কৃত্রিম বৃষ্টি, নানা রঙ্গের আলো আর মন মাতানো মিউজিকের তালে তালে নেচে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। চিলড্রেন পলটি  বাচ্চাদের উপযোগী অনেকগুলো রাইড নিয়ে সাজানো হয়েছে। শিশুরা অনায়াসে উপভোগ করতে পারে তাদের জন্য গড়ে তোলা এ স্বপ্ন রাজ্যটি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মজা করার জন্য আছে ফ্যামিলি পুল। সামান্য উঁচু থেকে খুব দ্রুত নিচের দিকে পড়ে মজা পায় দর্শনার্থীরা। বেশ উঁচু জায়গা থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে পুলে ধপাস করে পড়ার মজা পাওয়া যাবে এখানকার স্লাইড ওয়ার্ল্ডে । এছাড়াও মাল্টি স্লাইড, ডোম স্লাইড, প্লে-জোনের মতো মজার সব রাইড রয়েছে এখানে। ঈদের দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত চলবে ডি-জে শো। ডি-জে মিউজিক আর পুলে ঢেউয়ে নেচে গেয়ে উঠার মজার তুলনা হয় না। তাই তরুণ তরুণীদের কাছে চট্টগ্রামের আনন্দ বিনোদনের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় ওযাটার পার্ক সী ওয়ার্ল্ড।

ফয়’স লেক রিসোর্ট

ভিন্ন পরিবেশে ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতে সঠিক গন্তব্য হতে পারে ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলো। রিসোর্টে যেতে ও আসতে নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড লাগোয়া রিসোর্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। পাহাড়মুখী ও হ্রদমুখী কক্ষ। যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নিরিবিলি পরিবেশে লেকের পাশেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলো। এখানে থাকলে মনে হবে এ বুঝি জনমানবহীন নির্জন এক দ্বীপ। বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দা থেকে প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায় সহজেই। রিসোর্ট ও বাংলোয় আগত পর্যটকদের খাবার-দাবারের জন্য রয়েছে মান সম্পন্ন রেস্টুরেন্টে। যা চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে খাবার পরিবেশনের জন্য। অর্ডার দিলে পাওয়া যায় দেশী-বিদেশী সব মজাদার খাবার।

ঈদের দিন থেকে টানা দশ দিন দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম আয়োজনে খোলা থাকবে পুরো কমপ্লেক্স। ঈদের দশ দিন পর্যন্ত চলবে নানারকম আয়োজন। দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে গেম শো, মিউজিক্যাল শো এবং ছোট সোনামনিদের জন্য থাকছে ম্যাজিক শো। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। এত সব আয়োজনে ফয়’স লেক কমপ্লেক্স´ হতে যাচ্ছে অনিবার্য ঈদ গন্তব্য।

আরও পড়ুন