৭ ডিসেম্বর ২০২৫

কোরবানি: দূরীভূত হোক মনের কালিমা

সম্পাদকীয় »

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। ঈদ মোবারক। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকেন। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। ঈদুল আজহা আমাদের দেশে ‘কোরবানির ঈদ’ নামে পরিচিত। কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ।

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আ:) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। প্রতিবছর এ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছল মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর গোশত আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দু:খীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেন। শান্তি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল-আজহা।

করোনাভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। এ সময় সকলকে অসীম ধৈর্য নিয়ে সহনশীল ও সহানুভূতিশীল মনে একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে।

আমরা জানি, মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা। সেদিন যেসব কার্যাবলি সম্পন্ন করা ওয়াজিব হিসাবে গণ্য তার মধ্যে প্রধান হলো কোরবানি। কিন্তু কোরবানি দেওয়ার পরও আমরা কত জন ত্যাগের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হই। বর্তমানে সারা বিশ্বে সংকট চলছে। করোনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্ষতিগ্রস্ত কমবেশি সবাই। বাংলাদেশের অনেক মানুষ কষ্টে আছেন। তাই এই সময় ওয়াজিব একটি কোরবানি দেওয়ার পর আমরা বন্যার্ত ও অসহায় মানুষদের সাহাঘ্যে দান-খয়রাতের ওপর গুরুত্ব দিতে পারি। বাজারে মাংসের দাম এখন চড়া বিধায় কোরবানির মাংস আমরা যেন শরিয়ত অনুযায়ী যথাযথভাবে বিলিবণ্টন করতে পারি, যাতে কেউ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।

মানুষের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব আছে, তেমনি পশুত্বও আছে। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরবানির মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে তোলা। এভাবে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য হলো, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। মুলত, কোরবানি আমাদের বিপদে-আপদে ধৈর্যেরও শিক্ষা দেয়। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হোক। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বাংলাধারা পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

আরও পড়ুন