সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
কক্সবাজারে ঈদুল আযহার প্রথম তিনদিনে আশানুরূপ পর্যটকের অনুপস্থিতি ব্যবসায়ীদের হতাশ করলেও চতুর্থ দিন থেকে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। স্বরূপে ফিরেছে বালিয়াড়ির টইটম্বুরতা। পর্যটক ও দর্শনার্থী মিলে লাখ দেড়েক লোকের উপস্থিতি ছিল বুধবার সন্ধ্যায়। আর বৃহস্পতিবার ভোরে ৫০-৬০ হাজার পর্যটক সমুদ্রের ঢেউয়ে সান্নিধ্যে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, কোরবানির টানা ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন— এমন আশা ছিল পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটক আকর্ষনে ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়ও ঘোষণা করা ছিল হোটেলের রুম ভাড়ায়। এরপরও আশানুরূপ পর্যটক উপস্থিতি মিলেনি। তাই চরম হতাশ ছিলো পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
তবে, ঈদের চতুর্থ দিন থেকে সেই হতাশা কিছুটা কেটে উঠেছে। কক্সবাজারে বেড়েছে ভ্রমণ পিয়াসীদের উপস্থিত। লাখ খানেক পর্যটক অবস্থান করছেন কক্সবাজারে।
কলাতলীর হোটেল সী-নাইট’র ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ঈদের প্রথম তিনদিন খুবই হতাশায় কেটেছে। চতুর্থ দিন বুধবার বিকেল থেকে কিছুটা পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে। বেড়েছে রুম বুকিংও। আমাদের ৫০ শতাংশ রুমে গেস্ট উঠেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আরো কিছু পর্যটক আসবে বলে আশা করা যায়। সব হোটেলেই কমবেশি পর্যটক অবস্থান করছে বলে জেনেছি।
তারকা হোটেল দ্য কক্স টু-ডে’র সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) আবু তালেব শাহ্ বলেন, ঈদের প্রথম তিনদিন বালিয়াড়িতে লোক সমাগম বেড়েছিল। কিন্তু পর্যটক ও সমুদ্র দর্শনার্থীর মাঝে ভাগ আছে। পর্যটকরা হোটেলে অবস্থান করেন, রেস্তোরাঁয় খান, মার্কেটিং করেন আর দর্শনার্থীরা যানবাহন নিয়ে এসে নির্দিষ্ট সময় সমুদ্রের হাওয়া খেয়ে আবার বাসায় ফিরে যায়। তারা পর্যটনে কোন প্রভাব ফেলে না।
তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে কক্স-টু-ডেতে ৬৫ শতাংশ রুম বুকিং ছিল। বৃহস্পতি ও শুক্রবার আরো ১০-১৫ শতাংশ বুকিং বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পর্যটন জোনের ডজনাধিক তারকা হোটেলে প্রায় একই অবস্থা বলে উল্লেখ করেন তালেব শাহ্।
কলাতলীর হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, পর্যটক কক্সবাজারের লক্ষ্মী। পর্যটনে ভর করে হাজার কোটি টাকা লগ্নি রয়েছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে সেই লগ্নি উঠে আসে। আদায় হয় রাজস্বও। এখন যেহেতু অফ-সিজন তাই ঈদে বুকিংয়ে ৫০ শতাংশের অধিক ছাড় দেয়া হয়। প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এ নিয়ম সচল রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রের শহর কক্সবাজারের প্রতি আসক্তি সহজে কমার কথা নয়। কিন্তু জীবনধারণের ব্যয় বেড়েছে সবদিকে। তাই হয়তো অর্থ সংকুলানে ব্যর্থ হয় মাঝে মাঝে। আবার দেশে নতুন নতুন পর্যটন স্পট আবিস্কার হচ্ছে। এরমাঝে পদ্মা সেতু একটি। এবার ঈদে দর্শনার্থীরা পদ্মা সেতু এবং আশপাশের এলাকায় ঘুরেছেন বেশি।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে প্রতি রাতে ১ লাখ ২০-৩০ হাজার পর্যটক অবস্থান করা যায়। গত রমজানের সপ্তাহের বেশিদিনের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। তখন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যবসা হয়েছিল ৫০০-৬০০ কোটি টাকার বেশি। কোরবানির ঈদের ছুটিতে বলতে গেলে তেমনটি পর্যটক কক্সবাজার আসেননি। কিন্তু বুধবার হতে অর্ধলাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। আরো কয়েকদিন এটি অব্যহত থাকবে বলে আমাদের আশা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় ঈদ বা বিশেষ দিবসে পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি— এটি মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পর্যটক-দর্শনার্থী যারাই বালিয়াড়িতে আসুক তাদের সমুদ্র দর্শণ ও ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তায় রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেটাই পালনে সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।













