জিয়াউল হক ইমন »
চট্টগ্রামে এক পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর ‘ক্লু’ উদঘাটন করেছে পুলিশ। এর আগে ওই শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল ধুম্রজাল।
মূলত নিহতের শরীরে ইলেক্ট্রিক শকের চিহ্ন থাকায় পুলিশের ধারণা ছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে। কিন্তু নিহতের স্ত্রীর দাবি ছিল তার স্বামীকে ইলেক্ট্রিকের শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অবশেষে মৃত্যুর ৭ ঘণ্টার মধ্যে ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। বাকলিয়া থানা পুলিশ জানায়, নিহত নাহিদ বিভিন্ন পরিবহনে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরির পাশাপাশি বিদ্যুতের তার (তামার) চুরি চক্রের একজন সদস্যও ছিলো। ঘটনার দিন ট্রান্সফরমারের তার চুরি করতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও শরীর ঝলসে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর মোহাম্মদ শওকত নামে এক তামা-লোহা সামগ্রী বিক্রেতাকে আটক করে পুলিশ। শওকতও উক্ত চোর চক্রের সঙ্গে জড়িত।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বালুর মাঠ থেকে মোহাম্মদ শওকতকে আটক করা হয়। তাকে আটক করার পরই নাহিদের মৃত্যুর রহস্য জানতে পারে পুলিশ।
আটক শওকত নগরের বাকলিয়া থানার মেরিনার্স সড়কের পুরনো তামা-লোহার সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলায়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে স্ত্রীকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকায় ট্রান্সফরমারের তার চুরি করতে গিয়েছিল নাহিদ। সেখানে তার সঙ্গে আরও ২-৩ জন ছিল। সেখানে ট্রান্সফরমার থেকে তার খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন নাহিদ। এসময় ট্রান্সফরমার থেকে জ্বালানি তেল নাহিদের শরীরে পড়ে বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেলে তার সঙ্গে থাকা ওসমান ও বাকিরা আটক শওকতকে ফোন করে। পরে শওকতের পরামর্শে নাহিদকে কর্ণফুলী নদীপথে নৌকায় করে ওসমানসহ দুই ব্যক্তি বাকলিয়ায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে নাহিদের স্ত্রীকে নিয়ে তারা হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। পরে নাহিদ ও তার স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে মাঝপথে নেমে যান তারা।
নাহিদকে নিয়ে আসা সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. আরিফ বলেন, সকালে ফিশারিঘাট এলাকায় এক ব্যক্তি আমাকে মেডিকেল যাবে বলে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে দাঁড় করানো একটি নৌকা থেকে দুই ব্যক্তি অন্য একজনকে ধরাধরি করে সিএনজিতে তুলে প্রথমে এক কিলোমিটার এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে নাহিদের স্ত্রী ও মেয়েকে সিএনজিতে তুলে তারা চান্দগাঁও থানার সামনে নেমে গিয়ে আমাকে মেডিকেলে চলে যেতে বলে। আমি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এক পুলিশ সদস্য এসে বলেন রোগী মারা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকলিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহিম বাংলাধারাকে বলেন, নাহিদ-ওসমানসহ আরও ২-৩ জন মিলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ট্রান্সফরমারের তার চুরি করতে যায়। সেখানে গিয়েই আহত হন নাহিদ। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধারের পর তদন্ত শুরু করি। এতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল কলের সূত্র ধরে শওকতকে শনাক্ত করে আটক করার পর নাহিদের মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য জানা যায়। বৈদ্যুতিক তার চুরির সিন্ডিকেটটিকে শনাক্তের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, আজ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়ার পর পরিবহন শ্রমিক নাহিদের মৃত্যু হয়। মৃত নুরুল ইসলাম নাহিদ (৪০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিভিন্ন বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। সর্বশেষ তিনি হানিফ পরিবহনে কর্মরত ছিলেন।













